২০১৬ সালের ১ জুলাই। সেদিন ছিল সোমবার। ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় গোটা বিশ্বে তৈরি হয় চাঞ্চল্য। ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে জেএমবির সদস্যরা।
দেশের ভয়াবহ হলি আর্টিজান হামলার আট বছর আজ (১ জুলাই)। তবে ওই হামলার পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান চালায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। অভিযানে শীর্ষ জঙ্গি নেতাসহ অনেকেই মারা যায়, গ্রেপ্তার হয় অনেকে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে, জঙ্গিদের তৎপরতা এখনো আছে। তবে একের পর এক অভিযানে জঙ্গিরা দুর্বল হয়ে পড়েছে। জঙ্গি পুরো নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে আছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, জঙ্গিবাদে ধাবিত হয়ে কেউ কেউ হিজরত করছে। হিজরতকারীদের আমরা নিয়মিত খুঁজে বের করছি। সিটিটিসি প্রতি মাসেই দুই-একজনকে বের করে। যারা প্রাথমিক অবস্থায় থাকে তাদের বুঝিয়ে আবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করি। নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার কারণে আমরা এগুলো প্রকাশ করি না। তবে যাদের বুঝিয়ে ভালো পথে আনা যায় না, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান বলেন, জঙ্গি নির্মূল করতে র্যাবের পাশাপাশি পুলিশ ও সব গোয়েন্দা সংস্থা চেষ্টা চালাচ্ছে। জামিন নিয়ে অনেক জঙ্গি পালিয়ে আছে। তাদের ধরতে র্যাবের প্রতিটি ব্যাটলিয়ন কাজ করছে। তবে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটানোর সামর্থ্য নেই তাদের। হলি আর্টিজানে যেভাবে হামলা করেছিল সে শক্তি জঙ্গিদের নেই, তবে দেশে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি এখনো আছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, সব বাহিনীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশে জঙ্গিবাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বড় ধরনের কোনো জঙ্গি হামলার হুমকি ও আশঙ্কা এখন নেই। হলি আর্টিজান হামলার পর সব জঙ্গির সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ইনডেক্সের র্যাকিংয়েও বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নত দেশের চেয়ে নিরাপদ অবস্থানে আছে। সংঘবদ্ধ হয়ে জঙ্গিদের হামলার কোনো সুযোগ নেই।
পুলিশ বলছে, হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট অভিযান শুরু করে। রাজধানীর কল্যাণপুর, আজিমপুর, পুরান ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে জঙ্গিদের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের গোলাগুলি হয়। এ সময় অনকে জঙ্গি মারা গেলেও গেপ্তার করা হয় বেশ কয়েকজনকে। এর মধ্যে জিয়া ও আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতার নাম বেরিয়ে আসে।
পুলিশ সূত্র জানায়, জঙ্গিদের বিষয়ে আরও কঠোর হতে গত সপ্তাহে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয়েছে, ক্লোজড গ্রুপের মাধ্যমে তরুণদের মগজ ধোলাই করছে শীর্ষ জঙ্গি নেতারা। এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি নজরদারিতে রেখেখে। সংগঠনের মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে কেউ কেউ হিজরতের নামে বাড়িঘর ছেড়ে যাচ্ছে। জঙ্গিরা সুযোগ বুঝে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলোর বাইরে কিছু নতুন সংগঠন গড়ে ওঠেছে। তারা সাংগঠনিক কাজে বাধা পেলে পাল্টা আঘাত করার টার্গেট নিয়ে কাজ করে থাকে। তাদের মধ্যে অনেকে পাহাড়ি অঞ্চলে ঘাপটি মেরে থাকে। কিছুদিন আগে শাহাদাদ নামে নতুন একটি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ইসমাইল হোসেন, জিহাদ হোসেন ওরফে হুজাইফা ও আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তারা এক সময় আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো।
র্যাবের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ বলেন, দেশ থেকে জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। যারা গোপনে তত্পরতা চালাচ্ছে, র্যাবের অভিযানে তারা গ্রেপ্তার হচ্ছে। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে একটি জঙ্গি দল বান্দরবানে পাহাড়ি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) মাধ্যমে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল। সেখান থেকে র্যাবের তৎপরতায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। অনেকে ভুল পথে যাওয়ায় তারা আত্মসমর্পণ করেছে।