ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মাদারীপুরের কালকিনিতে এক গৃহবধূকে অফিসে নিয়ে ৮ ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে গণউন্নয়ন প্রচেষ্টা নামে এনজিও’র বিরুদ্ধে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় ওই নারীকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। রোববার (৩০ জুন) রাত ১১টার দিকে উপজেলার গণউন্নয়ন প্রচেষ্টার অফিসে ঘটনাটি হয়।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের বাঘরিয়া গ্রামের গৃহবধূ গণউন্নয়ন প্রচেষ্টা নামের এনজিওর কালকিনি শাখা থেকে সম্প্রতি ৮০ হাজার টাকা ঋণ নেন। তিনি ৩২ হাজার টাকার ঋণ পরিশোধ করেছেন। গৃহবধূর স্বামী বিদেশ গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন।
ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গতকাল দুপুর ৩টার দিকে গণউন্নয়ন প্রচেষ্টার কালকিনি শাখার ম্যানেজার মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে অফিস কর্মী সুবেন্দু বৈদ্য ও রুপালী বৈরাগী গৃহবধূকে স্বামীর বাড়ি থেকে তাদের অফিসে নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় স্থানীয় লোকজন ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগীতায় রাত ১১টার দিকে গৃহবধূকে এনজিও অফিস থেকে নিয়ে আসেন।
গহবধূ বলেন, ‘আমার স্বামী নিখোঁজ থাকায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারিনাই। তাই ম্যানেজার জসিম উদ্দিন, অফিস কর্মী সুবেন্দু বৈদ্য ও রুপালী বৈরাগী স্বামীর বাড়ি থেকে আমাকে তাদের অফিসে নিয়ে আটকে রাখেন। আমি অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোনো রকম সংসার চালাই। আমি কী করে ঋণের টাকা পরিশোধ করবো বলতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছোট বাচ্চার বয়স মাত্র ৯ মাস। আমাকে যখন নিয়ে আসা হয় তখন আমার বাচ্চাটা অনেক কান্না করেছে দুধের জন্য। তারা আমাকে ছাড়েনি।’
স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ সজিব বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন নিয়ে এবং ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় আটকে রাখা গৃহবধূকে আমরা উদ্ধার করি।’
গণউন্নয়ন প্রচেষ্টার ম্যানেজার মো. জসিম উদ্দিন গৃহবধূকে আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘কিস্তির টাকা পওনা থাকায় ওই গৃহবধূকে অফিসে আনা হয়েছিলো।’
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘নারীকে বাচ্চা থেকে আলাদা করে রাখা অমানবিক। আইনগতভাবে এটা করতে পারে না। এনজিওটির বিরুদ্ধে তদন্ত করে রাষ্ট্রের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘গতকাল রাতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এক নারীকে উদ্ধার করেছে। ভুক্তভোগী নারী লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কালকিনি উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘ঋণের জন্য এক গৃহবধূকে আটকে রাখার বিষয়টি জেনেছি। পুলিশ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করেছে।’