ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীরসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. বিপ্লব হোসেন বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২ জুলাই) মামলাটি করেন।
আরও পড়ুন: ধসে পড়া সেতুটি নিজ খরচে ভাঙবে ঠিকাদার
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিকস অ্যান্ড ব্রিজেজ লিমিটেড অ্যান্ড দি নির্মিতি’র (জেভি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা মোহাম্মদ মাসুদ, এলজিইডি’র টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী) একেএম রশিদ আহম্মদ, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাময়িক বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী, সাময়িক বরখাস্তকৃত সহকারী প্রকৌশলী রাজীব কুমার গুহ ও সাময়িক বরখাস্তকৃত উপ-সহকারী প্রকৌশলী একেএম জিন্নাতুল হক।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পারস্পারিক যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৭৩ লাখ ২৮ হাজার ৯৫৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্মাণাধীন সেতু দেবে যাওয়ার ঘটনায় তিন প্রকৌশলী বরখাস্ত
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (টিপিআইআইপি) আওতায় এলজিইডির অর্থায়নে টাঙ্গাইল শহরের বেড়াডোমা এলাকায় লৌহজং নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৪০ মিটার দীর্ঘ এই আর্চ সেতুটি নির্মাণ কাজের জন্য ব্রিকস অ্যান্ড ব্রিজেজ লিমিটেড অ্যান্ড দি নির্মিতি (জেভি) নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর চুক্তিপত্র হয়।
তিনি কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার ৮৪১ টাকা ব্যয়ে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর। ২০২২ সালের ১১ মে সেতুটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর চারটি বিলের মাধ্যমে ঠিকাদারকে ২ কোটি ৮০ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৬ টাকা দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেলো সাড়ে তিন কোটি টাকার সেতু
মামলায় বলা হয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পের মান নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাধায়ক প্রকৌশলী ঝুঁকি না নিয়ে ঢালাই কাজ করার নির্দেশনা দেন। ২০২২ সালের ১৬ মে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু গার্ডার ও ক্রস গার্ডার এবং দুই দিন পর ১৮ মে ডিক স্লাব ঢালাই করেন। ঢালাইয়ের কাজ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ২৬ মে চতুর্থ বিলের জন্য আবেদন করেন ঠিকাদার।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক, নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী, সহকারী প্রকৌশলী রাজিব কুমার গুহ এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী একেএম জিন্নাতুল হক প্রত্যয়ন করেন দরপত্রের শর্ত মোতাবেক সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজের মান সন্তোষজনক হওয়ায় ঠিকাদারকে চতুর্থ বিল বাবদ ৯০ লাখ ৪৫ হাজার ৪৯৪ টাকা পরিশোধ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেন। সে মোতাবেক প্রকল্প পরিচালক একই বছরের ৬ জুন চতুর্থ বিলটি পরিশোধ করেন। এরপর ওই বছরের ১৬ জুন নির্মাণাধীন সেতুটি ধসে পড়ে।
মামলায় বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে সংগৃহীত রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেতুটি নির্মাণ কাজে যথেষ্ট অবহেলা করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নকশা অনুসরণ না করে কাজ করলেও পৌরসভার প্রকৌশলীরা কাজ বন্ধ না করে দায়িত্বে চরম অবহেলা প্রদর্শন করেছেন। পৌরসভার মেয়র প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম হচ্ছে জেনেও কোনো প্রদক্ষেপ নেননি।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, নিরপেক্ষ প্রকৌশলী কর্তৃক পরিমাপের সময় চতুর্থ বিলে গার্ডার ও স্লাবের বিল বাবদ পরিশোধিত ৯০ লাখ ৪৫ হাজার ৪৯৪ টাকার কাজ দৃশ্যমান পাওয়া যায়নি।