ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমাসহ সব নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলার তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর সড়ক ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলার সড়ক ইতোমধ্যে পানিতে ডুবে গেছে। ফলে জেলা শহরের সঙ্গে দুই উপজেলায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাতায়তকারীরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার কমেছে। এখনো এই পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বেড়েছে জেলার তাহিরপুর উপজেলার নদ-নদীর।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতের পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ কাঁচা-পাকাসহ প্রধান সড়কগুলো ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে। জেলার তাহিরপুর উপজেলা-বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্রধান সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ৩ লাখ মানুষ। এই সড়কে পানি উঠায় জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথ বন্ধ থাকায় নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মধ্যনগর, ধর্মপাশা, তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দাদের। নৌকায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
সুনামগঞ্জ শহরের স্থানীয় বাসিন্দা অহনা চৌধুরী গত বুধবারে তাহিরপুর উপজেলায় ফুফুর বাড়িতে যান। সেখান থেকে আজ (মঙ্গলবার) সুনামগঞ্জ ফেরার পথে সড়কে পানি থাকায় আটকা পড়েন তিনি। এই সড়কটি যাদুকাটা নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। বিকল্প হিসেবে সড়কটি পার হতে নৌকায় ওঠেন অহনা। নৌকা পারাপারের পর পড়েন আরেক ভোগান্তিতে। মাত্র ১০ টাকার ভাড়া দিতে হয়েছে ১২০ টাকা।
অহনা চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ফুফুর বাড়িতে ঘুরতে গেছিলাম। ফেসবুকে দেখলাম সবদিকে পানি বাড়ছে। ভাবলাম আজ মনে হয় পানি কমবে। ফুফুর ঘরে পানি ওঠায় আমি আজ সুনামগঞ্জ চলে আসি। আসার সময় সড়কে পানি বেশি থাকায় একটি নৌকা দিয়ে পারাপার হয়েছিলাম। নামার পর নৌকার মাঝি বলছে, ২০০ টাকা দিতে হবে। অনেক সময় কথা বলে ১২০ টাকা দিতে হয়েছে তাকে।’
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মফিজুর রহমান বলেন, ‘শক্তিয়ারখলায় সড়ক ডুবে যাওয়ায় নৌকায় মানুষকে পারাপার করতে হয়েছে। বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগে আজকে সারাদিন আমাদের মোবাইল টিম কাজ করেছে। জরিমানা করা হয়েছে। আমরা এমন কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আমাদের নজরদারি রয়েছে।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘ভারত ও সুনামগঞ্জে বৃষ্টি কম হওয়ায় সুরমা নদীর পানি কমেছে। নিচু এলাকার দিকে এখন পানি বাড়বে। আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদ-নদীর পানি আরও বাড়তে পার।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সালমা পারভীন বলেন বলেন, ‘পানি কালকে থেকে আজকে বাড়ছে। সন্ধ্যা আবার বৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিও অল্প অল্প করে বেড়েছে। বন্যা পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রীও রয়েছে। শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্যের জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে।’