উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এই দুই উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৭ সেন্টিমিটার।’
বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা এবং ধুনট যমুনা নদী তীরবর্তী উপজেলা। যমুনায় পানি বাড়লে এই তিন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। গাবতলী উপজেলারও কিছু এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সারিয়কান্দি উপজেলা।
জানা গেছে, যমুনার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী নিচু এলাকার ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, বোহাইল, কাজলা, চন্দনবাইশা, সারিয়াকান্দি সদর, হাটশেরপুর, কুতুবপুর, ও কামালপুর ইউনিয়নের ১২২টি চরের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দারা গবাদি পশু নিয়ে বাঁধে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। এসব এলাকার রোপা, মাশকলাই, মরিচ, স্থানীয় জাতের গাঞ্জিয়া ধানসহ ফসলি জমি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, ‘শুধুমাত্র সারিয়াকান্দিতে ১০৮৫ হেক্টর জমির আউস ধান, ভুট্টা, পাট ও সবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।’
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ‘নদীতে পানি বাড়ার রেট কমে গেছে। এখন ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার, ১ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। আগামী ৭ তারিখ পর্যন্ত নদীতে পানি বাড়বে। ৮ জুলাই থেকে পানি কমতে শুরু করবে।’
নদীর বাঁধ এবং নদী ভাঙনের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু জায়গায় নদী ভাঙন আছে। ওই সব জায়গায় আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর এলাকায় আমরা পাহারা বসিয়েছি। রাতেও সেখানে আমাদের লোকজন ছিলো। নদী ভাঙনের বিষয়ে আমরা সব সময় সতর্ক অবস্থায় আছি।’
বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আজ দুপুর পর্যন্ত সারিয়াকান্দিতে ১২ হাজার পরিবার এবং সোনাতলা উপজেলায় প্রায় ৪৫০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় ছিলো। ধুনটে এখনো পানিবন্দি হওয়ার খবর আমাদের কাছে নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে বগুড়া জেলার বন্যার্তদের জন্য সব মিলিয়ে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার আর ৫০০ মেট্রিক টন জিআর চাল পাওয়া গেছে। আজকে সারিয়াকান্দিতে বন্যার্ত ৪৫০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সোনাতলা উপজেলার জন্য ১ হাজার প্যাকেট ত্রাণ রেডি করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ১০ কেজি জিআর চালসহ ত্রাণের প্যাকেটে দেওয়া হচ্ছে- মুড়ি, চিড়া, গুড়, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, পাউরুটি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট।’