১৫ জেলার পাশাপাশি নতুন আরও তিন জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বন্যা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রোববার (৭ জুলাই) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলার সংখ্যা ১৮টি। তার মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, ফেনী, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, বান্দরবান, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও টাঙ্গাইল জেলা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। বন্যা দুর্গত এলাকায় এসব মানুষের আশ্রয়ের জন্য প্রায় তিন হাজার আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৪০ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের চিকিৎসার জন্য ৬১৯টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ১৮ জেলায় ২১ হাজার ৭০০ টন চাল, নগদ ৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ৬৫ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবার, গো-খাদ্য বাবদ ৪০ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সিলেট-৩, সুনামগঞ্জ-১ ও মৌলভীবাজার-২ সংসদীয় আসনে ২ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, বন্যাদুর্গত মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজন বিবেচনা করে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হবে। ৬৪ জেলায় যাতে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী থাকে, সেজন্য ঘোষিত বরাদ্দের বাইরেও প্রত্যেকটি জেলায় অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে রেখেছি। বন্যাশেষে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে যাতে পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিতে পারি সেই কাজও আমরা এখন থেকে চালিয়ে যাচ্ছি।
‘সম্প্রতি উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী গত একনেক মিটিংয়ে সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বন্যা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, জানান প্রতিমন্ত্রী।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে কীভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। ত্রাণ কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে একটি মানুষও দুর্ভোগের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করবে না।
তিনি বলেন, আমরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শনিবার বন্ধের দিনেও আমরা অফিস খোলা রেখেছি এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেছি। এ ছাড়া বন্যাদুর্গত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করে খোঁজখবর নিয়েছি।
ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এরইমধ্যে সেই ক্ষয়ক্ষতির ওপর ভিত্তি করে সারা দেশে রেমালের ক্ষতিপূরণের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
বন্যায় ত্রাণ সংকট আছে কি না- এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ত্রাণ সংকট নেই। প্রশাসন কোথায় না যাওয়ার কারণে যদি সমস্যা হয় সেটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এড্রেস করব। কোনও দুর্গম এলাকায় যদি খাদ্য না পৌঁছার কারণে মানুষ কষ্ট করে, তবে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করলে প্রশাসন তাকে খাদ্য পৌঁছে দেবে।