স্বাস্থ্য

তৃতীয় বিএসএমএমইউ লিভার উৎসব উদযাপিত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন এবং ‘তৃতীয় বিএসএমএমইউ লিভার উৎসব ২০২৪’ হয়েছে।

রোববার (৭ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়টির সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে দিনব্যাপী এই উৎসব পালিত হয়।

২০২১ সালের ৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের এক আদেশবলে এই ডিভিশনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে লিভারের বিভিন্ন রোগের ব্যয়বহুল ও জটিল চিকিৎসাসমূহ এই ডিভিশনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাবে বলে আশাপ্রকাশ করেন।

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে লিভার রোগসহ অন্যান্য রোগের বিশেশায়িত চিকিৎসা সেবার উন্নয়নের তার সরকারের গৃহীত কর্মসূচিগুলোর কথা উল্লেখ্য করে লিভারের আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতিগুলো প্রচলনে দেশের লিভার বিশেষজ্ঞ এবং এই ডিভিশনের চিকিৎসকদের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি তিনি ন্যাসভ্যাকসহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় এই ডিভিশনের চিকিৎসকরা যে ভূমিকা রাখছেন, সেই বিষয়গুলো তার বাণীতে তুলে ধরেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা নিশ্চয়ই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ অর্জনে সক্ষম হব। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দুজনই তাদের নিজ নিজ বাণীতে ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনটির উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

প্রসঙ্গত, তৃতীয় বিএসএমএমইউ লিভার উৎসবে কিউবা, জাপান, ভারত ও তুরস্ক থেকে বেশ কয়েকজন লিভার বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়া সারাদেশ থেকে লিভার বিশেষজ্ঞ, ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও হেপাটোবিলিয়ারি সার্জনরা উৎসবে যোগ দেন। উৎসবের ফ্যাকাল্টি এবং অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আরও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্টওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলোজির শিক্ষক ও গবেষকরা।

উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে দেশের লিভার চিকিৎসা ও গবেষণায় অল্প সময়ে ডিভিশনটি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তার প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক।

ডিভিশনটির তৃতীয় বর্ষপূর্তির কেক কেটে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপাচার্য। এ সময় তিনি লিভারসহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় তার নেতৃত্বে এই বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিনগুলোতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ, অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান এবং কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. এজাজুল হক।

এর আগে ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

উৎসবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখা ও বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করায় কয়েকজন লিভার বিশেষজ্ঞকে ডিভিশনটির পক্ষ থেকে সন্মানিত করা হয়। বিজ্ঞান গবেষণায় অবদান রাখায় কিউবার সরকার কর্তৃক ‘অর্ডার, কার্লোস জে. ফিনলে’ প্রাপ্তির জন্য ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর, ইন্টারভেনশনে অবদান রাখায় অধ্যাপক ডা. সেলিমুর রহমান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তিতে অধ্যাপক ডা. মো. এজাজুল হক, সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার’স ইউমেন ইন হেপাটোলজির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় ডা. রোকসানা বেগম এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হওয়ায় ডা. বিপ্লব কুমার সাহাকে সন্মাননা জানানো হয়।

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনটি লিভার চিকিৎসায় সর্বাধুনিক ইন্টারভেনশনগুলোর প্রচলন করেছে। এরই মধ্যে ডিভিশিনটিতে লিভার সিরোসিসের চিকিৎসায় হেপাটিক ভেনাস প্রেশার গ্রেডিয়েন্ট ও ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শান্ট (টিপস), লিভার ফেইলিওরের জন্য মুজিব প্রটোকল (প্লাজমা এক্সচেঞ্জ) ও লিভার ডায়ালাইসিস (হেমোফিলট্রেশন) এবং লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিওফ্রিকুয়েন্সি এব্লেশন (আরএফএ), ট্রান্সআর্টারিয়াল কেমোএম্বোলাইজেশন (টেইস) ও ইমিউনথেরাপি চালু করা হয়েছে।

ডিভিশনটিতে পাশাপাশি লিভার বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। এখানে বাংলাদেশ, কিউবা ও জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্ভাবিত হেপাটাইটিস বি’র নতুন ওষুধ ন্যাসভ্যাকের একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। লিভার ক্যানসার চিকিৎসায় ডিভিশনটিতে একাধিক গবেষণা বর্তমানে চালু রয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্টওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলোজির গবেষকদের সাথে যৌথভাবে ডিভিশনটিতে ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসার নানারকম দেশীয় ভেষজ ওষুধ ও প্রোবায়োটিকের গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অদুর ভবিষ্যতে এখানে ট্রান্সপ্ল্যান্ট হেপাটোলজির ওপর একটি ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালু হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে অনুমোদন প্রদান করেছেন।