দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক গ্রাহক ব্যাংকের আমানত তুলে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে মূল্যস্ফিতির কারণে অনেক গ্রাহক ব্যাংকের আমানত তুলে ব্যয় করছেন। এসব কারণে নতুন আমানত সংগ্রহ করতে ব্যাংকগুলো কিছুটা হোচট খাচ্ছে, তারল্য কমছে। তবে এপ্রিলে এসব ব্যাংকে আমানত যে পরিমাণ বেড়েছে, তারচেয়েও বেশি বেড়েছে ঋণ বিতরণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে এপ্রিল শেষে আমানত দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আমানতের চেয়ে ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে ৭৩ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা।
ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমদানি ব্যয় বাড়লেও রপ্তানি আয় কমেছে। এপ্রিলে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি আয় এসেছে ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, মার্চ মাসে এসেছিল ৭ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। এ সময় রপ্তানি আয় কম এসেছে ২৪০ কোটি টাকা।
এপ্রিলে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করেছে ১৩ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। মার্চে যা ছিল ১১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে আমদায়ি ব্যয় ২ হাজার ১০৭ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছে।
এপ্রিলের প্রতিবেদনে অতিরিক্ত তারল্য কমার তথ্য না থাকলেও মার্চের প্রতিবেদনে তিন মাসে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে ৭৭ শতাংশ বা ৫ হাজার ১২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য কমার তথ্য প্রকাশ করা হয়। সেই তথ্যে বলা হয়, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা, যা আগের প্রান্তিক শেষে ছিল ৬ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ৫ হাজার ১২৫ কোটি টাকা বা ৭৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
আমানতের তুলনায় বেশি হারে ঋণ বিতরণ করায় এসব ব্যাংকের এডিআর রেশিও (ঋণ-আমানত অনুপাত) বেড়ে গেছে। তবে এপ্রিলের প্রতিবেদনে সেই তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। মার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে এসব ব্যাংকের এডিআর রেশিও ছিল শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে ছিল শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর গত বছরের মার্চে ছিল শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক রয়েছে ১০টি। ব্যাংকগুলো হচ্ছে-ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), গ্লোবাল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।