স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে

 

চলতি বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৭৫১ জন। এতে মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের। আক্রান্ত ও মৃত্যুর শীর্ষে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সবচেয়ে কম সিলেটে। ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ রোগী চট্টগ্রাম সিটি কেপোরেশনের বাইরের এলাকায়। এবার ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক। ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন পুরুষ, কিন্তু মৃত্যু বেশি হচ্ছে নারীর।

দেশে এডিস মশার কামড়ে হওয়া ডেঙ্গু জ্বরে ২০২৩ সালে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হন ও মারা যান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুসারে, ওই বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ২১ হাজার ২৭ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ জনের। এর আগের ২৩ বছরে (২০০০ থেকে ২০২২) ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৮৬৮ জনের। সে হিসেবে গত বছর ঘরে ঘরে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করেছিল।

এবারও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনেকেই উদ্বিগ্ন। এখন চলছে বর্ষা মৌসুম। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এমন আবহাওয়া এডিস মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত, উল্লেখ করে রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, এমন অবস্থায় হঠাৎ করেই সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তবে, আক্রান্তের সংখ্যানুপাতে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ (২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ জুলাই) তথ্য অনুসারে, রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মোট রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৭৫১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ২৭৬ ও নারী ১ হাজার ৪৭৫ জন।

রোগীদের মধ্যে জানুয়ারিতে ১ হাজার ৫৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৩৯, মার্চে ৩১১, এপ্রিলে ৫০৪, মে মাসে ৬৪৪, জুনে ৭৯৮ এবং জুলাইয়ে ১০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩, মার্চে ৫, এপ্রিলে ২, মে মাসে ১২, জুনে ৮ এবং জুলাইয়ের প্রথম দুই দিনে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ৪৭৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী ২৩২ জন।

একসময় ডেঙ্গু রাজধানী ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, এমনকি গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। গত বছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা কম ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মনে হলেও আগামী দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন।

তিনি বলেন, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান দেখা যাচ্ছে, তাতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলা যেতে পারে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। তবে, রোগীর সংখ্যানুপাতে মৃতের হার বেশি, এটাই চিন্তার বিষয়।

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা অভিযান শহরে কিছুটা হচ্ছে, ফলও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু, সারাদেশে যদি একসঙ্গে মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করা না হয়, তাহলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। গত বছরের চেয়ে এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রোগীর সংখ্যা বাড়লে সঙ্গত কারণে মৃত্যুও বাড়বে।

ডা. মুশতাক আরও বলেন, হাসপাতালে প্রচলিত ডেঙ্গু রোগীর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। এক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগীর ব্যবস্থাপনায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পরে টারশিয়ারি লেভেলে হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কয়েক বছর ধরে ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কারণ, ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বলতে গেলে কোনো কার্যক্রমই নেই। যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের মধ্যে0 আত্মসন্তুষ্টির ভাব আছে বলে আমার মনে হয়। এটাই সবচেয়ে খারাপ কথা।

এদিকে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, আমরা কেউ চাই না, ডেঙ্গুতে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হোক। যদি হয়, ওপরওয়ালার ইচ্ছায় আমরা সামলাতে পারব বলে আশা করি।

মন্ত্রী বলেন, সব চিকিৎসক কিন্তু জানেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসায় কী করতে হবে। আমাদের একটা গাইডলাইন আছে, সেটি সম্পর্কেও তারা অবগত। পর্যাপ্ত স্যালাইন মজুত আছে। আমি এরইমধ্যে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, আমাদের এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডিসিএল) নিয়ে মিটিং করেছি, যেন কোনোভাবেই স্যালাইনের ঘাটতি না হয়।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে করণীয় প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা কয়েকটি মিটিং করেছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং দুই মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। ভবিষ্যতেও আমরা মিটিং করব। দুটি মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে কাজটি করতে হবে। স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে হবে।