ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে ব্যাংকগুলো মুনাফা স্ফিত বা বাড়িয়ে দেখালে তালিকাভুক্ত নিরীক্ষক কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিশেষ প্রতিবেদন আকারে জানাবে। এছাড়া শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের আগে ঝুঁকি সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও নিরীক্ষক কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। ব্যাংক কোম্পানির বহিঃনিরীক্ষণ বিধিমালা,২০২৪ এ এসব কথা বলা হয়েছে। যা ২০২৫ নিরীক্ষা বছর থেকে কার্যকর হবে।
বহিঃনিরীক্ষণ বিধিমালায় বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানিগুলোর আর্থিক নিরীক্ষা সম্পাদনের লক্ষ্যে পেশাদার ও দক্ষ বহিঃনিরীক্ষক নির্বাচনের শর্তাবলী এবং বহিঃনিরীক্ষার আওতা নির্ধারণ, নিরীক্ষা প্রতিবেদনগুলো সুনির্দিষ্ট করতে, আর্থিক প্রতিবেদনগুলো ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা নিশ্চিত করতে এই বহিঃনিরীক্ষণ বিধিমালা করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে দেশের ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ মোট সম্পদের ৮০ শতাংশ নিরীক্ষিত করতে হবে। এছাড়া ৯ মাসের কার্যক্রমের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন নিরীক্ষা করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন এ নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিলের জন্য। ঋণ শ্রেণিকরণের অনিয়মও নিরীক্ষা করবে নিরিক্ষক প্রতিষ্ঠান। এই নিরিক্ষার মাধ্যমে সম্পদ, বিনিয়োগের শ্রেণিকরণ, বিপরীতে রক্ষিত প্রভিশনসহ অন্যান্য বিষয় চিহ্নিত করবে নিরিক্ষক প্রতিষ্ঠান। অন্তর্বর্তীকালীন ও বিশেষ প্রতিবেদনের পাশাপাশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা প্রতিবেদন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনও তৈরি করতে পারবে তালিকাভুক্ত নিরিক্ষক প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন এ নীতিমালা অনুযায়ী, একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি ব্যাংকে টানা তিন বছরের বেশি নিরীক্ষা করতে পারবে না। আর একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দুই দফায় তিন বছর করে ছয় বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ব্যক্তি, ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো এজেন্ট বা প্রতিনিধি বা ব্যাংকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি নিরীক্ষক বা নিরীক্ষা দলের সদস্য হতে পারবেন না।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের ৯ মাস ভিত্তিক যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করবে। সেখানে ঋণ শ্রেণিকরণ ও ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিংয়ের অনিয়ম, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া তথ্য-উপাত্ত বা নথিপত্রে প্রাপ্ত অনিয়ম, খেলাপি ঋণের তথ্য যথাসময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো বা সিআইবিতে দাখিল করা হয়েছে কি না, সম্পদ-বিনিয়োগের শ্রেণিকরণ ও এর বিপরীতে প্রভিশনিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম থাকলে তা চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রতিবেদন জমা দেবে।
অন্তর্বর্তীকালীন, নিয়মিত প্রতিবেদনের পাশাপাশি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান চাইলে বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ প্রতিবেদনও তৈরি করতে পারবে। কোনো ক্ষেত্রে এই বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে, তা-ও নীতিমালায় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘিত হলে, অসততা ও প্রতারণা-সংক্রান্ত কারণে কোনো ফৌজদারি অপরাধ ঘটলে, ব্যাংকের সংরক্ষিত মূলধন ওই ব্যাংকের আবশ্যক মূলধনের ৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে, পাওনাদারের পাওনা পরিশোধের নিশ্চয়তা বিঘ্নিত হলে, কোনো গুরুতর আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটলে বা পাওনাদারের পাওনা মেটানোর মতো ব্যাংকের সম্পদ যথেষ্ট কি না, এ বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হলে বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাবে নিরিক্ষক প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া রপ্তানি প্রণোদনা, রপ্তানি ভর্তুকি, নগদ সহায়তার আবেদনপত্র নিরীক্ষণে অনিয়ম; দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুসারে সব ধরনের প্রযোজ্য রাজস্ব সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী নস্ট্রো হিসাব যথাযথভাবে সমন্বয়; ব্যাংকের সুশাসন ব্যবস্থায় ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়েও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে ওঠে আসবে।
ঋণ খেলাপির তথ্য সঠিক ভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবিতে ব্যাংক সঠিকভাবে পাঠিয়েছে কিনা তাও নিরিক্ষা প্রতিবেদনে তুলে ধরবে নিরিক্ষক।
ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ বিধি সম্মতভাবে ও বিনিয়োগের পূর্বে ঝুঁকি নিরুপণ, পরিচালন ব্যয় ও সম্পদ ক্রয়ের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি প্রতিপালন ও হিসাব যথাযথভাবে হয়েছে কিনা সেগুলো নিরীক্ষা প্রতিবেদনে তুলে ধরবে নিরিক্ষক।