ঢাকা-বেইজিং উভয়পক্ষ একে অপরের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, একে অপরের মূল স্বার্থ, প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলোতে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সমর্থনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ সমর্থন করে না চীন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ‘এক-চীন’ নীতিতে তার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর শেষে ঢাকা-বেইজিং যৌথ ঘোষণায় এ কথা বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে ৮-১০ জুলাই বেইজিং সফর করেন। সফর শেষে ঢাকা-বেইজিং ২৭ দফা যৌথ ঘোষণা দেয়।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, চীনা পক্ষ দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভিশন-২০৪১ এর অধীনে পরিকল্পিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার এবং স্বাধীনভাবে তার জাতীয় অবস্থার সাথে উপযোগী একটি উন্নয়ন পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
উভয়পক্ষ জোর দিয়েছে যে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৭৫৮ প্রশ্নাতীত এবং কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। বাংলাদেশ এক-চীন নীতি এবং তার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে যে, চীনের সরকার সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাইওয়ান চীনের অংশ। বাংলাদেশ চীনের মূল স্বার্থ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় চীনের প্রচেষ্টা সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে চীনকে সমর্থন করে।
যৌথ ঘোষণায় উভয়পক্ষ কৌশলগত যোগাযোগ বাড়াতে বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠানে সফর, চিঠি বিনিময় এবং বৈঠকের মাধ্যমে কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাসকে আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছে। উভয়পক্ষই সরকারি ও জনগণের পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সহযোগিতার জন্য সম্মত হয়েছে। উভয়পক্ষই পারস্পরিক স্বার্থের ইস্যুতে মতামত বিনিময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে শাসক দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সফরে দুই দেশের মধ্যে ২১টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন আরএমবি সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে চীন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সুবিধার প্যাকেজ ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দৃঢ় সহায়তা দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বেইজিংয়ের গ্রেট হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তিনি গ্রান্ট বা সহায়তা, সুদমুক্ত ঋণ, কনসেশনাল বা ছাড়যুক্ত ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ—এই চার ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধার একটি প্যাকেজ দেওয়ার ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট নিজে থেকেই বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে এবং প্রয়োজনে আরাকান আর্মির সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানান।