চাকরিসহ সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কোটা সংস্কারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করার সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপসহ লাঠিচার্জ করে। এতে সাংবাদিক-পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
বাংলা ব্লকেডের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুর সোয়া ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীরা রওনা দিলে আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন রাস্তায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
পুলিশের বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জসহ অন্তত ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশকে লক্ষ করে শিক্ষার্থীদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ-শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আহত তিন সাংবাদিক হলেন, আমাদের সময়ের কুবি প্রতিনিধি অনন মজুমদার, চ্যানেল আই’র কুবি প্রতিনিধি সৌরভ সিদ্দিকী ও ক্যাম্পাস প্রেসের কুবি প্রতিনিধি অন্তু। আহতদের চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, বিকেলে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে তারা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ির দিকে অগ্রসর হতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। বাধা উপেক্ষা করে মহাসড়কের দিকে যেতে চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী জানান, আহতদের কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। একই সঙ্গে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ জেলা কোটা বাতিল করা হয়। পরে ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাত জন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এতে সরকারি চাকরিতে আবারও কোটা ফিরে আসে।
এ রায়ের প্রতিবাদে ও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
গত ৯ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। ৪ জুলাই আপিল বেঞ্চ জানায়, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মামলাটির শুনানি শুরু হবে।
পরে বুধবার (১০ জুলাই) আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঝুলন্ত কোনো সিদ্ধান্ত মানবেন না উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেলে আবারও বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এর মধ্যে, বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। একই সঙ্গে জনদুর্ভোগ তৈরি হলে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিতও দেন তিনি।