দেশের জ্বালানির চাহিদা পূরণে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি এবং রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় ১৮ লাখ ৩০ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করবে সরকার। এর মধ্যে ভারত থেকে ৩০ মেট্রিক টন ডিজেল এবং আটটি দেশ থেকে ১৮ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৩৪১ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৫২৮ টাকা।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ক্রয় প্রস্তাব তিনটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলন।
সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১’-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৪ সালের ২৩তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভার অনুমোদনক্রমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। পেট্রোবাংলা এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। তার মধ্যে ৩টি প্রস্তাব কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) সুপারিশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক মেসার্স টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড এক কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১২.৫৮ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ৫৮৩ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ৫২৮ টাকা।
সচিব বলেন, ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ২০২৪ সময়ের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ২০২৪ সালের পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর সিসিইএ’র সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে জি-টু-জি মেয়াদী চুক্তির আওতায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে মূল্য নির্ধারণ করে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল (০.০৫% ‘সালফার’) আমদানি করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ২৩.১৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৭৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেলের (প্রিমিয়াম) দাম ৫.৫০ মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) ২০২৪ সালের পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর সিসিইএ’র সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। মেয়াদী চুক্তির আওতায় জি-টু-জি ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের আটটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান (এএসপি ইন্দোনেশিয়া; ইএনওসি, আরব আমিরাত; আইওসিএল, মালয়েশিয়া; পেট্রোচায়না, চীন; পিএলসিএল, মালয়েশিয়া; পিটিটিটি, থাইল্যান্ড; ওকিউটি, ওমান ও ইউএনআইপিইসি, চীন) থেকে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে ১৮ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনতে (প্রিমিয়াম ও রেফারেন্স প্রাইসসহ) ব্যয় হবে ১৩৯ কোটি ৬৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬ হাজার ৪৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেল (প্রিমিয়াম) গ্যাস অয়েলের দাম ৮.৭৫ মার্কিন ডলার, জেটএ-১-এর দাম ১০.৮৮ মার্কিন ডলার, মোগ্যাসের দাম ৯.৮৮ মার্কিন ডলার, প্রতি মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল ৪৬.৭০ মার্কিন ডলার এবং মেরিন ফুয়েলের দাম ৭৬.৮৮ মার্কিন ডলার। উল্লিখিত দরে গ্যাস অয়েল ১১ লাখ টন, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন জেট এ-১, ফার্নেস অয়েল ২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন, মোগ্যাস ১ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন এবং মেরিন ফুয়েল ৩০ হাজার মেট্রিক টন কেনা হবে।