সাক্ষাৎকার

প্ল্যান ছাড়া বিল্ডিং হলে ভাঙা হবেই: রাজউক চেয়ারম্যান

গত ৮ এপ্রিল রাজউকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার। দায়িত্ব নিয়ে রাজউককে একটি দুর্নীতিমুক্ত, স্মার্ট সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে বহুবিদ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। রাজউককে সরকারের একটি ‘মডেল প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত করার তার এই প্রয়াস রাজউকের সেবা গ্রহীতাদের আশাবাদী করে তুলেছে। কিন্তু কেমন হবে সেই পরিকল্পনা? কীভাবেই-বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি অগ্রসর হবেন— সম্প্রতি রাজউক কার্যালয়ে রাইজিংবিডিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি রাজউককে কীভাবে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চান, এ বিষয়েও বিস্তারিত বলেছেন রাজউক চেয়ারম্যান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডি’র সিনিয়র রিপোর্টার এসকে রেজা পারভেজ

রাইজিংবিডি: অনেক সময় দেখা যায়, প্লান ছাড়াই বহুতল ভবন উঠে গেছে। আবার প্ল্যানে আছে একরকম, নির্মাণ হয়েছে অন্যরকম। কিংবা প্ল্যান অনুযায়ী ভবনের কিছু অংশ করার পর কয়েক বছর পর তা বর্ধিতকরণের সময় প্ল্যান মানা হয় না। বিষয়গুলোতে রাজউকের নজরদারির নেই বলে অভিযোগ আছে। আবার অনেকক্ষেত্রে যারা নজরদারি করবেন, তাদের ম্যানেজ করে সব হয়। বিষয়টিতে কীভাবে দেখছেন?  

সিদ্দিকুর রহমান সরকার: এই বিষয়ে আমি একমত। এমন হচ্ছে। তবে, বিষয়টি আমরা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবো। বিশেষ করে এটা হয় ঢাকার বাইরে। বিশেষত সাভার, নারায়ণগঞ্জ, মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় অনেকগুলো এমন ভবন প্ল্যান ছাড়া বিল্ডিং করে ফেলেছে। এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশন, স্থানীয় এমপি ও যিনি কাউন্সিলর আছেন, তাদের সঙ্গে বসে ফায়সালা করা যায়। এ ছাড়া নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, খেলার মাঠ, স্কুল-কলেজ কীভাবে কী করা যায়, আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বিল্ডিংয়ে ভায়োলেশন করে কিছু কাজ হয়। এগুলো শক্ত হাতে দমন করবো। আমাদের একটি নগর উন্নয়ন কমিটি আছে। দ্রুত একটি নতুন আইন আছে। যে আইনে যদি কেউ এমন করে এবং সীমিত অনিয়ম হলে, ফাইন করা হবে। বড় ধরনের অনিয়ম হলে বিল্ডিং ভেঙে ফেলা হবে। এই বিষয়ে আমরা কোনও কম্প্রোমাইজ করবো না।

রাইজিংবিডি: ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি তালিকা করা হয়েছিল। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় বহু ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে। এসব ভবন নিয়ে রাজউকের পরিকল্পনা কী?

সিদ্দিকুর রহমান সরকার: ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিতকরণ হয়ে গেছে। অনেকগুলো ভবন সরকারি প্রতিষ্ঠানের। তাদের ওয়ার্নিং দিয়েছি। আমাদের কাছে ওয়েবসাইটের ম্যাপসহ আছে। আমরা বলেছি, এগুলো ধ্বংস করে ফেলতে অথবা সংস্কার করতে। এই বিষয়ে আমাদের সংশ্লিষ্ট শাখার সঙ্গে জোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

রাইজিংবিডি: সম্প্রতি বেইলি রোডের একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ওই ভবনে ফায়ার এক্সিটসহ ভবনের প্ল্যান যথাযথ ছিল না। ঢাকার অধিকাংশ বিল্ডিংয়ে এমন হচ্ছে। আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে। যখন দুর্ঘটনা ঘটে, তখন এটা সামনে আসে। কয়েকদিন পর আবারও থেমে যায়। হয়তো নতুন কোনও ঘটনা না ঘটা অবধি। বিষয়টি কেন হয়? রাজউক কেন কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে না?

সিদ্দিকুর রহমান সরকার: দেখুন, আমরা বিল্ডিংয়ের অনুমোদন দিই যে, কোনটা আবাসিক হবে আর কোনটা বাণিজ্যিক। আমরা তো বিল্ডিংয়ের অনুমোদন দিই। আর লাইসেন্স দেয় সিটি করপোরেশন। আর ব্যবসার অনুমোদন দেয় ডিসি (জেলা প্রশাসক) অফিস। তিতাস গ্যাসের একটা ব্যাপার আছে। ফায়ার সার্ভিসেরও একটি বিষয় আছে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে একটি আদেশ আসছে। ওটা আসলে আমরা সবাই মিলে, এই যে বিল্ডিংগুলো আছে এক্সস্টিং যেখানে সমস্যা, এটা যদি রাজউকের কমার্শিয়াল না হয় এবং আবাসিক বিল্ডিংয়ে যদি হোটেল থাকে, সেটা আমরা বন্ধ করবো। সংশ্লিষ্ট যে অন্য সংস্থাগুলো আছে তারাও যাবে। কোনও সমস্যা থাকলে মালিকের সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করবো। আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চলবে না। এটা আমি একা পারবো না, সংশ্লিষ্ট সবগুলো সংস্থাকে নিয়ে পদক্ষেপ নেব। আমরা চাই ব্যবসা চলুক, তবে জনগণের নিরাপত্তা আগে।

প্রতিবেদকের সঙ্গে রাজউক চেয়ারম্যান

রাইজিংবিডি: রাজধানীর নতুন শহর পূর্বাচলকে কেন্দ্র করে অনেক তথ্য গণমাধ্যমে আসে। এই প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা কী?

সিদ্দিকুর রহমান সরকার: আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমরা একটি ওয়ানস্টেপ সেন্টার করবো। ওখান থেকে আমরা প্রত্যেকের ওয়ানস্টেপ সেন্টার করে তাৎক্ষণিক ৩ কাঠা, ৫ কাঠা প্লটের প্ল্যান পাশ করে দেব। বিদ্যুৎও সব সেক্টরে চলে গেছে। একটা, দুটো সেক্টর বোধহয় বাকি আছে। আর পানিও কিন্তু পাঁচটা সেক্টরে চলে যাবে। এরই মধ্যে এক, দুই, তিন সেক্টরের পানি চলে গেছে। সবাইকে যা ফ্যাসিলিটি দেওয়া দরকার সব দেব। যেন সবাই কাজ করতে পারেন।

প্রাতিষ্ঠানিক ও কমার্শিয়াল প্লটগুলো নিয়ে জটিলতা ছিল। এটা হাইকোর্টের একটি রুল ছিল। সেই রায় মেনে আমরা কাজ করবো। প্লটগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রতিবন্ধকতা ছিল, সেটিও তারা গুছিয়ে দিচ্ছে; যেন আমরা প্রাতিষ্ঠানিক প্লটগুলো বরাদ্দ করতে পারি। প্রাইমারি স্কুলের জন্য এরই মধ্যে আমরা প্রাইমারি মাস এডুকেশনের মিনিস্ট্রি তাদের ১৩টি প্লট দিয়ে দিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, সবদিক দিয়ে পূর্বাচলকে সচল করা।

রাইজিংবিডি: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সিদ্দিকুর রহমান সরকার: রাইজিংবিডির পাঠকদেরও আমার অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ।

প্রথম পর্ব পড়ুন- দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স, স্মার্ট সেবা পাবে গ্রহীতা