সারা বাংলা

কারফিউ না থাকায় নোয়াখালীতে জনমনে স্বস্তি 

নোয়াখালীতে শুক্রবার (২৬ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা শিথিল করা হয়েছে কারফিউ। ফলে জনমনে ফিরে এসেছে স্বস্তি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দিনের বেলায় এবং রাতের কিছুটা অংশ কারফিউ মুক্ত থাকায় সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। সারাদিন তারা নির্বিঘ্নে ও স্বস্তি নিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারছেন। সবাই যদি সচেতন হন তাহলে কারফিউ’র প্রয়োজন থাকবে না। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশব্যাপী সহিংসতা হলেও ব্যাতক্রম ছিলো নোয়াখালী। মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধের মাধ্যমে নোয়াখালীতে আন্দোলন সীমাবদ্ধ ছিলো। জেলার কোথাও সহিংসতা হয়নি। যে কারণে নোয়াখালীতে দিনভর কারফিউ শিথিল করেছে প্রশাসন। তবে, সতর্কতার কারণে এখানে শুধুমাত্র রাতে কারফিউ জারি করা হচ্ছে।  

মোজাম্মেল হোসেন নামে ঠিকাদার বলেন, ‘কাজের কারণে সব সময় জেলা শহরে থাকতে হয়। আন্দোলনের শুরু থেকে দেখেছি, শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করেছেন। পুলিশও তাদের কর্মসূচিতে হস্তক্ষেপ করেনি। যার কারণে এ জেলায় কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি।’

স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল বলেন, ‘আমার দুই ছেলে। একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অন্যজন চাঁদপুর মেডিক্যালের শিক্ষার্থী। আন্দোলনের কারণে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। সময় মতো তারা বাড়ি ফিরতে পারায় মনের ভয় দূর হয়েছিল। আমাদের নোয়াখালীতে কিছু হয়নি, এটা একটা স্বস্তির বিষয়।’

আনিসুর রহমান নামে ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি ব্যাংকে চাকরি করি। পোষ্টিং শহরের বাইরে। সময় মতো অফিসে ঢুকতে হয়। অফিস থেকে বের হতে সন্ধ্যা পার হয়ে যায়। আন্দোলনের কারণে যানবাহনের সংকট থাকায় বাড়িতে ফিরতে দেরি হতো। পরিবার দুশ্চিন্তায় থাকতো। তবে সময় মতো সরকার শক্ত হাতে হাল ধরায় দেশ অনাকাঙ্খিত ঘটনার সম্মুখীন হয়নি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কারফিউ থাকার কারণে মনের ভয় পুরোপুরি দূর হচ্ছিল না। আস্তে আস্তে কারফিউ শিথিল হওয়ায় ভয় কেটে যাচ্ছে।’

কামরুল ইসলাম নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে ব্যবসার অবস্থা ভালো না। তার ওপর আন্দোলনের কারণে অবস্থা আরো খারাপ ছিল। কারফিউ কারণে মানুষ কম বের হয়েছেন। কাঁচা বাজারে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম ছিল চড়া। কারফিউ এখন দিনের বেলায় না থাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যতোটুকু সময় পাচ্ছি সে সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষে করার চেষ্টা করছি।’ 

জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আন্দোলনের শুরু থেকেই পুলিশ প্রশাসন অত্যান্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছে। আমাদের সদস্যরা কোনো উসকানিতে পা দেয়নি। শিক্ষার্থীরাও সুশৃঙ্খল কর্মসূচি পালন করেছেন। শেষ দিকে কিছু দুবৃর্ত্ত অনুপ্রবেশ করে অবস্থা ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছে। পুলিশ সজাগ থাকার কারণে তারা (দুর্বৃত্ত) সফল হতে পারেনি। স্বস্তির বিষয়, নোয়াখালীতে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর কিছু হয়নি।’

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অন্দোলনের শুরু থেকে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসেনর কঠোর দৃষ্টি ছিলো। নোয়াখালীতে কিছু না ঘটায় স্বস্তি পেয়েছি। জেলাবাসী ও শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ। কারফিউ আস্তে আস্তে শিথিল হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো।’