সারা বাংলা

টাঙ্গাইলে আ.লীগ, ছাত্রলীগ কার্যালয় ভাঙচুরে কোটি টাকা ক্ষতি

কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে টাঙ্গাইল জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় এবং কাউন্সিলরের অস্থায়ী কার্যালয় ভাংচুর করা হয়েছে। এ সব ঘটনায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন নেতাকর্মীরা। 

এ সব ঘটনায় টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও মধপুর থানায় ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সব মালায় ৩৬৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত এক হাজার ৭৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আন্দোলনকারী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৮ জুলাই সকাল ১১টায় কোটা সংস্কারের দাবিতে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে কাজী নজরুল সরণি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। পরবর্তীতে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নগরজলফৈ এলাকায় যাওয়ার সময় পুলিশ শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ অফিস ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক খোরশেদ আলম বাদী হয়ে শনিবার (২০ জুলাই) নাম না জানা ২০০ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। 

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হাসান বাদী ৯২ জনের নাম উল্লেখসহ নাম না জানা ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

শুক্রবার (২৬ জুলাই) টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদী হয়ে ৩৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৮০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, আন্দোলনকারীরা ১৮ জুলাই তার অস্থায়ী কার্যালয় ভাংচুর করেছেন।

গত ১৯ জুলাই দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আশরাফউল্লাহ বাদী হয়ে ৩৭ জনের নাম উল্লেখসহ নাম না জানা ২৫০ জনকে আসামি করে কালিহাতী থানায় গত ২১ জুলাই মামলা করেন। 

আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের কেয়ারটেকার জামাল হোসেন বাদী হয়ে ৯৬ জনের নাম উল্লেখসহ নাম না জানা ৩০০ জনের বিরুদ্ধে গত ২০ জুলাই মধুপুর থানায় মামলা করেন। 

একই দিন শ্রমিক অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে শ্রমিক নেতা মনছের আলী বাদী হয়ে ১০৩ জনের নাম উল্লেখসহ নাম না জানা ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মধুপুর মামলা করেন। 

এছাড়া, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে ১৯ জুলাই ধনবাড়ী থানায় এসআই জহিরুল ইসলাম মামলা করেন।

টাঙ্গাইল সদর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ ফরিদ জানান, ১৮ জুলাই জেলা ছাত্রলীগ অফিসে সভা শেষ করে দুপুর ১টার দিকে নিচে নামছিলেন। হঠাৎ আন্দোলনকারীরা দুই পাশ থেকে এসে তাদের ধাওয়া করেন। পরে তারা পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে তালা দেন। আন্দোলনকারীরা তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছবিসহ থাই গ্লাস ভাংচুর করে। আন্দোলনকারী হাতুরী, রাম দা, লোহার রডসহ দেশীর অস্ত্র নিয়ে সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ ফরিদ, সহ-সভাপতি মো. আরিফুর রহমান বাচ্চুসহ অন্তত ৬ জনকে পিটিয়ে আহত করেন। 

ফিরোজ মাহমুদ ফরিদ আরও বলেন, ‘যারা আমার দলীয় কার্যালয় ভাংচুর করে আমাদের উপর হামলা করেছেন, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী না। ছাত্রদল ও শিবিরের নেতারা আমাদের নাম বলে বেদম মারধর করেছেন। আমি হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’   জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হাসান বলেন, হামলাকারীরা ছাত্রলীগ অফিসের ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন। তারা ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডার। তাদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তিনি। 

জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পুঁজি করে কুচক্রী মহল দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। তারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুরে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. লোকমান হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মামলাগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।