শেরপুরের তিনটি উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি এখন নেমে গেছে। উঁচু এলাকায় পানি কমে যাওয়ায় খালে-বিলে মাছ ধরা পড়ছে। এ জন্য কম পানিতে মাছ ধরার জনপ্রিয় ফাঁদ হিসেবে স্থানীয়দের কাছে বাঁশের তৈরি চাঁই-এর চাহিদা বেড়েছে।
নিচু এলাকায় কম পানিতে ক্ষেতের আইলের মাঝখানে কেটে চাঁই পেতে রাখা হয়। পানির স্রোতে মাছ নিচু এলাকায় যাওয়ার সময় চাঁই-এর ভিতরে ঢুকে পড়ে। সেই মাছ আর বের হতে পারে না।
শেরপুর জেলার বিভিন্ন হাটে এখন চাঁই বিক্রি হচ্ছে। অঞ্চলভেদে মাছ ধরার এই সরঞ্জামকে ভিন্ন নামে ডাকা হয়। ধন্দি, বানা, খাদন, খালই, বিত্তি, বুড়ং ও ভাইর নামে পরিচিত। এ বছর চাঁই বিক্রি করে কারিগররা ভালো আয় করছেন।
জেলার ঝিনাইগাতী, নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন হাটে চাঁই বিক্রি হচ্ছে। কারিগররা জানান, একটি চাঁই তৈরিতে প্রকারভেদে খরচ পড়ে ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। আর তা খুচরা বিক্রি করেন ১৫০ থেকে ৭০০ টাকা।
ঝিনাইগাতী উপজেলার লয়খা ও শ্রীবরদী উপজেলার গোপাল খিলা গ্রামের অনেক বাসিন্দা সারা বছর চাঁই তৈরি করেন। কৃষকরাও কাজের ফাঁকে ও গৃহিণীরা অবসরে চাঁই বানান। বাড়ির তরুণ-তরুণীরা এতে তাদের সহযোগিতা করেন। এতে সেখানে কয়েকশত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
লয়খা গ্রামের বাসিন্দা রমিজ মিয়া বলেন, বাজারে চাঁই বিক্রি বেড়েছে। বাঁশ ও সুতা দিয়ে তৈরি তার চাঁই-এর মান ভালো হওয়ায় জেলার বাইরেও তিনি সরবরাহ করছেন। তবে আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
একই গ্রামের হরমুজ মিয়া বলেন, ‘সারা বছর পারিবারিক কাজের ফাঁকে চাঁই বানাই। আর ঘরে মজুত করে রাখি। বর্ষা শুরু হলে চাঁই বিক্রি করি। আমার বাড়িতে দুটি ঘর আছে চাঁই মজুত করে রাখার। আমি পাইকারি বিক্রি করি। এবার শেরপুরের বাইরে চাঁই বেশি বিক্রি করেছি। আমার তৈরি চাঁই ময়মনসিংহ, জামালপুর ও নেত্রকোনা জেলায় বিক্রি করেছি।’
গৃহিণী জয়নব বলেন, ‘ছোট বেলায় বাবার কাছে চাঁই তৈরি করা শিখেছি। বাড়ির কাছে বিয়ে হয়েছে। স্বামীও চাঁই বানায়। তাই চাঁই বানিয়ে জীবন পার করছি। তবে আগে লাভ বেশি হতো। এখন আগের মতো আর বাঁশ পাওয়া যায় না। বাঁশের দামও বেশি। তাই লাভ কম হয়।’
তবে সারা বছর বানিয়ে রাখা যায়, এতে বছর শেষে বেশ ভালো আয় করা যায় বলে জানান তিনি।
শ্রীবরদী উপজেলার কর্নঝোড়া বাজারে চাঁই বিক্রেতা আমান উল্ল্যাহ বলেন, বর্ষা শুরু হওয়ায় চাঁই বিক্রি বেড়ে গেছে। অনেকে চাঁই কেনার জন্য আসছে। তার ভালো আয় হচ্ছে। তিনি জানান, এক ট্রাক চাঁই তিনি জামালপুরে বিক্রি করেছেন। এতে তার সারা বছর চাঁই তৈরির খরচ উঠে গেছে।
শেরপুর বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক বিজয় কুমার দত্ত বলেন, শেরপুরে চাঁই তৈরির সঙ্গে অনেক গবির মানুষ জড়িত। অনেক পাইকারি ব্যবসায়ীও রয়েছে। ক্ষুদ্র পরিসরে যারা কাজ করেন, তাদের ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় আনার সুযোগ রয়েছে। যদি কোনো উদ্যোক্তা ঋণ নিতে আগ্রহী হন, তবে বিসিক তার পাশে দাঁড়াবে।