হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের পাশে জ্বলজ্বল করছে নারী বিশ্বকাপের দিন গণনার চিত্র। ঘড়ির কাঁটা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ঘনিয়ে আসছে বিশ্বকাপ শুরুর ক্ষণ।
এইতো শুধু দিন গণনা। বিশ্বকাপ আয়োজনকে ঘিরে বসে নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)। স্টেডিয়াম ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে জোরেশোরে, খরচ হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। আয়োজনের কোনো কমতি রাখতে চাইছে না বোর্ড। কিন্তু যাদের ঘিরে এত আয়োজন সেই নারী ক্রিকেট দলের অবস্থা কেমন?
অবস্থা বিবেচনা করতে গেলে চোখের সামনে ভেসে উঠবে এশিয়া কাপের চিত্র। কাগজে কলমে সেমিফাইনালে খেললেও আদতে ছোট দলের বিপক্ষে দুই জয় ছাড়া বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের অবস্থান বেহাল। সেমিতে ভারতের বিপক্ষে হতে হয়েছে নাস্তানাবুদ। ১০ উইকেটের বড় হার!
ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি বলছেন ব্যাটিং দুর্বলতার কথা। বিশেষ করে টপ অর্ডার। তিনি আরও একটি সমস্যার কথা বলেছেন, ভারতের মতো দলের বিপক্ষে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বের গড়বড় করেন ব্যাটাররা।
‘টপ-অর্ডার রান না পেলে দলের জন্য ভালো স্কোর দাঁড় করানো খুব কঠিন হয়ে যায়। আমি মনে করি এটা মানসিক ব্যাপার। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা যেভাবে খেলেছি, পুরোপুরি ভিন্ন ছিল। এটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। কারণ, তাদের শট খেলার সামর্থ্য আছে। পুরো বিষয়টা মানসিক। কারণ, যখনই ভারতের বিপক্ষে খেলে, তারা ভিন্নভাবে খেলে।’
এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ময়নাদতদন্তে উঠে এসেছে একই চিত্র। গ্রুপপর্বে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু হয়। দিলারা আক্তার-ইশমা তানজীমের ওপেনিং জুটি থেকে আসে ৬ রান। একই রানে হারায় ৩ উইকেট। ১৭ রান করতে নেই হয়ে যায় ৪ উইকেট। অল্প রানে বেশি উইকেট হারানোর পর ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন, বাংলাদেশ পারেওনি। ফল, হার।
পরের দুই ম্যাচ ছিল অপেক্ষাকৃত দুর্বল মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দিলারার সঙ্গে ওপেনিংয়ে আসেন মুর্শিদা খাতুন। ওপেনিং জুটিতে ২৪ রান আসলেও এরপর ৮৪ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। টপ অর্ডারে রান আসায় সহজ জয় পায় মেয়েরা।
মালয়েশিয়ার বিপক্ষে দিলারা-মুর্শিদার ওপেনিং জুটি থেকে আসে ৬৫ রান! ১৫৪ রানে হারায় দ্বিতীয় উইকেট। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ফিফটি করেন মুর্শিদা। বড় জয়ে বাংলাদেশ নাম লেখায় সেমিফাইনালে।
সেমিতে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ভারত। তবুও সবশেষ ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্যাটিং দিচ্ছিল ভরসা। কিন্তু না, মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং, ৭ রানে হারায় ওপেনিং জুটি। ৩৩ রানে নেই ৫ উইকেট। টেনেটুনে কোনোমতে ৮০ রান! ফল ১০ উইকেটের বড় হার!
মে’তে ভারতকে আথিতেয়তা দেয় বাংলাদেশ। ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ব্যাটিংয়ে একই দশা। কোনো ব্যাটার সব মিলিয়ে ১০০ রান করতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৯৩ রান আসে জ্যোতির ব্যাট থেকে। দিলারা ৭৮, মুর্শিদা ৬৯ ও রিতু মনি ৬৬ রান করনে। টপ অর্ডারের বেহাল দশার পর বাকিদের অবস্থা কেমন হবে সেটা স্পষ্ট।
এর আগে এপ্রিলে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। এই সিরিজেও সর্বোচ্চ ৯৬ রান আসে জ্যোতির ব্যাট থেকে। ফাহিমা খাতুন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৩, দিলারা আক্তার তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ ও মুর্শিদা করেন ২৯ রান। দুই সিরিজেই বাংলাদেশের টপ অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ।
বড় দলগুলোর বিপক্ষে বেহাল দশা হলেও দুর্বল দলের বিপক্ষে রান পান ব্যাটাররা। ১৫ ম্যাচ খেলা দিলারার সর্বোচ্চ গড় ৩৩ মালয়েশিয়ার বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে ৭ ম্যাচে ৮৫ রান করলেও এক ম্যাচেই আসে ৩৯ রান।
মুর্শিদার গড় মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ৫০, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৫। ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশের নিচে, অস্ট্রেলিয়া-নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দশের নিচে আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০.৩৩!
অন্যান্যদের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও সতীর্থদের জ্যোতির পারফরম্যান্সও দিচ্ছে দুশ্চিন্তা। ভারতের বিপক্ষে মাত্র ২১.১৩! পাকিস্তানের বিপক্ষে আরও কম (১৪.৯২)। অথচ দুই দলের বিপক্ষেই খেলেছেন সবচেয়ে বেশি সমান ১৬টি করে ম্যাচ। ১১ ম্যাচ খেলা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গড় অবশ্য ভালো (৩৬.২৫)। বড় দলগুলোর বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি গড় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে (৪৩)।
বিশ্বকাপের আগে ব্যাটিংয়ে এমন পারফরম্যান্স দুশ্চিন্তার বলে মন্তব্য করেছেন নারী বিভাগের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। রাইজিংবিডিকে মুঠোফোনে নাদেল বলেন, ‘এটা দুশ্চিন্তার। মেয়েরা দেশে ফিরলে আমরা উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করবো। আমাদের ভাবনায় আছে এটা।’
২০১৪ থেকে এখন পর্যন্ত নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ২১টি ম্যাচ খেলেছে। জয় মাত্র ২টিতে। বাকি ১৯টিতেই হার! ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে সাফল্যের পালে হাওয়া লাগাতে পারবে কি বাংলাদেশের মেয়েরা?