কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারসহ নয় দফা দাবিতে ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি নিয়ে বিনোদপুর বাজারে গিয়ে পথসভা করেন তারা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচির কারণে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বিকল্প হিসেবে রাজশাহী বাইপাস সড়ক দিয়ে চলাচল করায় সেখানে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি-পুলিশ। পুরো কর্মসূচি তাদের পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘জেগেছেরে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘আবু সাঈদ মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, আমাদের হল বন্ধ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’- এসব স্লোগান দেন।
আন্দোলনরত আতিক নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা আজ একটি মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এরপর সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাবো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির সমন্বয়ক মেহেদী হাসান সজীব বলেন, ‘আমরা শান্ত ছিলাম। আমাদের ভাইদের বুকে গুলি চালিয়েছে। আমরা সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছি। সারা দেশের ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রজাতন্ত্রের চাকর, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে। কিন্তু শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের টাকায় কেনা গুলি আমাদের ছাত্রদের বুকে চালিয়েছে। এসবের প্রতিবাদে আমরা আজও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকিব বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। আমরা বিক্ষুব্ধ। আমি ছাত্র-ছাত্রীদের বলতে চাই শুধু এখন নয়, সারাজীবন তোমরা ন্যায্যতার পথে থাকবে। তোমরা সুবিচারের পক্ষে আছো, ন্যায়বিচারের পক্ষে আছো, ন্যায়ের পক্ষে আছো।’
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জামিরুল ইসলাম ও ড. মো. সাইফুল ইসলাম একাত্মতা পোষণ করে অংশ নেন। কর্মসূচি চলাকালে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। তবে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবিগুলো হলো-
১. ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
৩. যেসব এলাকায় ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার পুলিশের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে বরখাস্ত করতে হবে।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে।
৫. নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৬. ছাত্র হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আটকসহ তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে।
৭. দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে।
৮. অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলগুলো খুলে দিতে হবে।
৯. আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থী যেন অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।