সারা বাংলা

লোকসানে হতাশ ফরিদপুরের মরিচ চাষিরা

কাঁচা মরিচ উৎপাদনে দেশের অন্যতম জেলা ফরিদপুর। এ জেলার মধুখালী উপজেলার উঁচু জমিতে প্রতিবছর  মরিচ আবাদ করেন চাষিরা। বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যখন দেশে সংকট দেখা দেয়, সেই সময়ে ফরিদপুরের কৃষকদের উৎপাদিত মরিচ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজারে পাঠানো হয়। তবে, এবছর মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে মরিচ উৎপাদনে। বিশেষ করে, গাছে আশানুরূপ ফলন না থাকায় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই খাদ্য পণ্যটির সরবরাহ কম রয়েছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।  

মধুখালী উপজেলা সদরে কাঁচা মরিচের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র কয়েকজন কৃষক মরিচ নিয়ে বাজারে এসেছেন। তাদের দাবি, ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা মণ দরে মরিচ বিক্রি করেও লাভবান হতে পারছেন না।

মধুখালী সদর উপজেলার শকেনের মোড় এলাকার কৃষক খলিল মোল্লা বলেন, ‘এক শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করতে খরচ হয় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। ৩৩ শতাংশ জমিতে মরিচ উৎপাদন হয় আড়াই মণের মতো। প্রতি মণ মরিচ উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ১৩ হাজার ২০০ টাকা। বাজারে যে দাম পাচ্ছি, তাতে আমাদের লোকসান হচ্ছে।’

মধুখালী উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের আমডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে প্রচণ্ড খরা এবং অনাবৃষ্টির কারণে মরিচ গাছ বাড়তে পারেনি। খরায় অনেক জমির মরিচ গাছ পুড়ে গেছে।’   

উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মো. শামিম শেখ বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে জমি থেকে ১০ থেকে ১২ মণ কাঁচা মরিচ তুলতাম। এবার সেই জমি থেকে আধা মণ মরিচও তােলা যাচ্ছে না। ফলে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা মণ দরে মরিচ বিক্রি করেও লাভবান হতে পারছেন না কৃষকরা।’ 

তিনি আরও জানান, এক শতাংশ জমিতে কাঁচা মরিচ উৎপাদনে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো খরচ হয়। 

উপজেলার মেকচামী ইউনিয়নের বামুন্দি গ্রামের মরিচ চাষি উত্তম রায় বলেন, ‘সার ও গাছের ওষুধের অতিরিক্ত দাম, পাশাপাশি কয়েকবার জমিতে সেচ দেওয়ায় কাঁচা মরিচের উৎপাদন খরচ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। ফলে মরিচের দাম বেশি পেলেও লোকসান হচ্ছে।’

উপজেলার বৈকুন্ঠপুর, রামদিয়া, ঘােষকান্দী, বামুন্দী ও গাজনা এলাকা কাঁচা মরিচ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এসব এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জমিতে গাছ থাকলেও তাতে কাঁচা মরিচ ছিল না। খরায় গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক কৃষকই জমির পরিচর্যা না করায় সেসব জমি আগাছায় ভরে গেছে। যারা জমি পরিচর্যা করেছেন সেসব জমির মরিচ গাছে নতুন করে ফুল আসত শুরু করেছে।

ঘােষকান্দী গ্রামের মরিচ চাষি আজিজার মোল্লা বলেন, ‌‘গত কয়েক দিনে বৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে সাঁজ (ফুল) এসেছে। কিছুটা হলেও আশায় বুক বাঁধছেন মরিচ চাষিরা। এই সাঁজ (ফুল) থেকে মরিচ তােলা গেলে ক্ষতি থেকে বাঁচা যাবে।’

মরিচ চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ফলন ভালাে হলে ২ থেকে ২ হাজার টাকা মূল্য প্রতি মণ মরিচ বিক্রি করা গেলেও চাষিরা লাভবান হবেন। কিন্তু গাছে মরিচ না থাকলে মূল্য বাড়লেও লাভ হওয়ার সুযােগ থাকবে না।’

মধুখালীর মরিচ বাজারের আড়ত ব্যবসায়ী মো. আলম শেখ জানান, বাজারে মরিচের আমদানি বেশি হলে তারা লাভবান হন। আমদানি কম হলে অতিমূল্যে মরিচ কিনে লোকসানের শঙ্কায় থাকেন তারা। পর্যাপ্ত পরিমাণ মরিচ কিনতে না পারলে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ বেড়ে যায় অনেক।

বৃষ্টি হওয়ায় কাঁচা মরিচের গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে

মধুখালী পৌর সদরের ব্যবসায়ী মাে. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মধুখালীর বাজারে প্রতিদিনই মরিচের দাম ওঠানামা করছে। প্রতি মণ মরিচ ১১ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে ওঠা নামা করছে। গত বছর এই সময়ে বিপুল পরিমাণ মরিচ বাজারে চলে আসে। এবছর সরবরাহ কম থাকায় মরিচের দাম অতি মাত্রায় বেড়ে গেছে।’

ব্যবসায়ী মাে. সুমন খন্দকার বলেন, ‘মধুখালী আড়ত থেকে আষাঢ়-শ্রাবন মাসে উৎপাদিত মরিচ ঢাকা, চট্রগ্রাম, নারায়নগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাে. মাহাবুব ইলাহী বলেন, ‘এবার শুরু থেকে তীব্র খরার কারণে খেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সময় মতাে গাছে মচির আসেনি। এতে বাজারে পর্যাপ্ত মরিচ সরবরাহ হচ্ছে না। গত কয়েকদিন বৃষ্টির পর বর্তমান কৃষকের জমিতে মরিচ গাছে সাঁজ (ফুল) এসেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ মরিচ বাজার আসবে বলে আমি আশাবাদী।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ মরিচ উৎপাদনকারী উপজেলার মধ্যে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় এবছর ২ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন মরিচের আবাদ হয়েছে। যা থেকে ২০ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদন হবে। ফলে বাজারে মরিচের মূল্য স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’