রাজশাহীতে চলছে অবিরাম বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে স্বস্তি পেয়েছেন আমন চাষিরা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে পানি না কিনেই আকাশের পানিতে জমি সেচের কাজ করতে পারছেন তারা। ফলে চাষিদের খরচ কমছে।
বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠে অনেক কৃষকের জমিতে হাঁটুসমান উঁচু হয়েছে ধানগাছ। এখন সেচ দিয়ে জমি থেকে আগাছা পরিষ্কারের পর একবার সার দেওয়ার পালা। অনেক কৃষককে এখনো জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে দেখা গেছে। তাদের জমিতেও দরকার সেচ। সেই সেচের চাহিদা পূরণ করে দিচ্ছে শ্রাবণের বৃষ্টি।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া সহকারী আনোয়ারা খাতুন জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি চলছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে আমন ধান চাষ হয়ে থাকে বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে। গত বছর আষাঢ়-শ্রাবণ পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। এ বছর ১২ আষাঢ়ের পর থেকেই বরেন্দ্র অঞ্চলে নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ধানি জমির সেচ হচ্ছে বলে টাকা খরচা করে পানি কিনতে হচ্ছে না চাষিদের। ফলে হাসি ফুটেছে তাদের মুখে। এবার আমন চাষের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা পূরণ হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
আমন মৌসুম শুরুতেই সেচের পানি কিনতে হয়নি বলে বিঘায় কৃষকের সাশ্রয় হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এবার আমনের আবাদের জন্য প্রস্তুতকৃত ৬ লাখ ২৬ হাজার ৭৭৫ বিঘা জমির হিসাবে সাশ্রয় প্রায় ১৫ থেকে ১৮ কোটি টাকা। জমি জো ধরার পর এখন আগাছা পরিষ্কার ও সার প্রয়োগের জন্যও প্রয়োজন পানি। ফলে প্রায় ৩০ হাজার আমন চাষি স্বস্তিতে আছেন।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির আর্শীবাদে আমনের জমি প্রস্তুত করছেন অনেক কৃষক। কাদাপানির জমিতে নেমে বৃষ্টিতে ভিজেই ধানের চারা রোপণ করছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কৃষাণিরা।
কৃষক জুলফিকার আলী বলেন, ‘বৃষ্টি থাকায় কৃষকের সেচখরচ যেমন সাশ্রয় হয়েছে তেমনি এবার আমন চাষ একটু আগেভাগেই শুরু হয়েছে। ফলে উৎপাদন শেষে আগেভাগেই জমি ফাঁকা হয়ে যাবে। সে সময় ফাঁকা জমিতে সরিষা, টমেটো বা আলুর চাষ করে এগিয়ে থাকবেন চাষিরা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে এবার রোপা আমনের বীজতলা হয়েছে। জমিতে চারাও লাগানো হয়েছে বৃষ্টির পানিতে। আগস্টের প্রায় ১৫ তারিখ পর্যন্ত রোপা আমনের চারা লাগানোর কাজ চলবে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমরা আশা করছি, রোপা আমন উৎপাদনে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে সেটা পূরণ হবে।’