ক্যাম্পাস

হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সহায়তা করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শনিবার (৩ আগস্ট) সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টরিয়াল বডি দুই বা ততধিক সদস্যকে এ সহায়তার জন্য দায়িত্ব দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ওইসব বিজ্ঞপ্তিতে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের মোবাইল নম্বরও প্রকাশ করা হয়েছে। রাইজিংবিডির সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত-

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)

বিবৃতি দিয়ে কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হলে প্রক্টরিয়াল বডিকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে ইবি প্রশাসন। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোটাসংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্বদ্যিালয়ের কোনো নিরাপরাধ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে।

এ সহযোগিতা গ্রহণের জন্য ইবি সহকারী প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসাইন (০১৭৫৩৭৯৫৫৪২), ড. মো. আরিফুল ইসলাম (০১৭১২৬৯৬৫০২), কাজী মওদুদ আহমেদ (০১৭১৯৪০২৯৮১), মিঠুন বৈরাগী (০১৭৫৮২৩৯৬২২), মো. ইয়ামিন মাসুম (০১৯১৪২৬৯২৩৫), মোসা. তানিয়া আফরোজ (০১৭৯৮৩১০৩১৪), মো. হুমায়ুন কবির (০১৭২৩২১৭০৮৬) ও মো. নাসির মিয়ার (০১৩০০০৫১৫১৪) সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়রত কোনো নিরাপরাধ শিক্ষার্থী যেন অহেতুক হয়রানির শিকার না হয়, এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে ইবি প্রশাসন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নিরপরাধ কোনো শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হলে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে কুবি প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিরপরাধ শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হলে, তাকে অথবা তার সহপাঠী/অভিভাবককে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কোনো শিক্ষার্থীকে অহেতুক হয়রানি না করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বানও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

এর আগে, কুবির তিনজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হলে তাদের সবাইকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাড়িয়ে এনেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। এছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পুলিশ ঢুকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুরো আন্দোলন জুড়ে কোনো পুলিশ ঢোকেনি। এছাড়াও আন্দোলন শেষে শিক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে পারে, সে জন্য প্রায় প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাসের ব্যবস্থা করেছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন,  'আমরা আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই প্রক্টরিয়াল বডি তাদের কল্যাণে বিশ্বরোডে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল। তারপরেও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমরা উপস্থিত না থাকলে হয়তো ব্যাপারটি আরো বাড়তো। সর্বশেষ আমরা তিনজন শিক্ষার্থীর গ্রেফতার হওয়ার খবর পাই। উপাচার্য স্যারের নির্দেশনায় ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে আমরা তাদের মুক্ত করি। সমন্বয়কদের সহযোগিতার কারণে আন্দোলনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে প্রবেশ করতে হয়নি। শিক্ষার্থীদের পাশে আমরা সব সময় আছি।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা চিন্তা করেছি। নানা চাপ থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পুলিশ ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া আমরাই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে হয়তো আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করবো বলে ঘোষণা দিয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় তিনজন শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে। আরও যদি কোন শিক্ষার্থী আটক থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে জানালে তারা ব্যবস্থা নিবে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নোবিপ্রবির নিরপরাধ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের যাতে হয়রানি না করা হয় সে লক্ষ্যে সার্বিক সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ ও হয়রানির শিকার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো: আনিসুজ্জামান (০১৭১৭৪৯৯৭৪৯) এবং সহকারী প্রক্টর সাহানা রহমান (০১৭৭৫১২৬০৯৭) ও মাহবুবুর রহমানের (০১৯৬৫৪৮৪৫০০) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, নোবিপ্রবির নিরপরাধ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার হয়রানি বিষয়ে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)

নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বশেমুরবিপ্রবির প্রক্টর এবং প্রক্টরিয়াল বডির সমন্বয়ে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। 

পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এ টিমে প্রধান হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান। টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, ড. মো. শরাফত আলী, গাজী মোহাম্মদ মাহবুব, এসএম নাসির উদ্দীন ও পার্থ সারথি রায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নিরাপরাধ শিক্ষার্থী অহেতুক হয়রানির শিকার হলে তাকে অথবা তার সহপাঠী/অভিভাবককে ভিজিল্যান্স টিমের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপরাধ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার হয়রানি না করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

ভিজিল্যান্স টিমের প্রধান কামরুজ্জামান বলেন, আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখতে চাই। আমরা চাই না, আমাদের কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী আহত হোক। তারা আমাদের সন্তান। আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের নিরাপত্তার জন্যই আমরা ভিজিল্যান্স টিম গঠন করেছি এবং অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। শিক্ষার্থীরা কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।

এর আগে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এভাবে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।