শিক্ষার্থীদের নিকট দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইবার সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন গুজব, অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশবিরোধী একটি মহল চলমান সংকট জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটতে চায়, সেই তৎপরতা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তৃতীয় পক্ষের কাছে চলে গেছে। যারা দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় এবং দেশকে খাদের কিনারায় নিয়ে যেতে চায়।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার পতনের জন্য নৈরাজ্য করছে। এতো কিছুর পরও প্রধানমন্ত্রী ধৈর্য সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। সবাই জানে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক কতটা নিবিড়। আগেই বলেছিলাম, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে লাশের রাজনীতি করছে। গতকালও তাদের উস্কানিতে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির সহিংসতা করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা করেছে। যার ফলে দুটি তাজা প্রাণ ঝড়ে গেলো। একজন পুলিশ সদস্য নিহত হলো। সারা দেশের বিভিন্নস্থানে হামলা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে।
এ সময় বিএনপিনেতা মির্জা ফখরুলের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, গতকাল পুলিশ সদস্যকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার এই দায় কার? কারা হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ-হামলা করলো। আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব সহিংস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না।
‘শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবি করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মেনে নিয়েছেন। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘসহ, বিশ্বের যারা এই তদন্ত কাজে অংশ নিতে চায়, তাদের জন্য দরজা খোলা- এ কথা তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এখানে জাতিসংঘ যদি যুক্ত হয়, আমাদের কোনও আপত্তি নেই। সেকথা আমরা স্পষ্ট করে জানিয়েছি’, বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিভেদ নয়, আমরা ঐক্যে বিশ্বাসী। যারা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস আমাদের চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্রের পরিণত হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অর্জিত গণতন্ত্র, উন্নয়ন-অগ্রগতিকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকলের সম্মিলিত সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, অবুঝ শিশু কোনও রাজনৈতিক বিবেচনায় পড়ে না। অবুঝ শিশুকে হত্যা করে, তাজা প্রাণ ঝরিয়ে সরকারি দলের কোনও লাভ নেই। লাভ তাদের, যারা শিশুর লাশ থেকে ফায়দা লুটতে চায়। ইউনিসেফকে বলব, ৩২ শিশুর নাম-ঠিকানাসহ জানতে চাই। এটা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব, সত্য খুঁজে বের করব।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার। এদেশের মানুষের ভোট-ভাতের অধিকার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারই ফিরিয়ে এনেছে। আজ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের অপচেষ্টা চালাচ্ছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত। তারা জনগণ দ্বারা বারবার প্রত্যাখ্যাত ও ব্যর্থ। তারা যে কোনও আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টায় উন্মত্ত থাকে। এখন কোটা আন্দোলনে ভর করে সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র করছে।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।