চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, ডাকসুর সাবেক ভিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বর্তমান সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অনার্য মুর্শিদ
রাইজিংবিডি : দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটা গণবিদ্রোহ হয়ে গেল। আপনি এ আন্দোলনকে কীভাবে দেখছেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : অবিস্মরণীয়, বিস্ময়কর এই গণজাগরণ। আমার রাজনৈতিক জীবনে এ রকম সাধারণ ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এর আগে আমি দেখিনি। এমনকি ঊনসত্তরের গণঅভুত্থ্যানেও সাধারণ ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এ পরিমাণে ছিল না। তবে ঊনসত্তরের গণঅভুত্থ্যানের সময় একটা অতিরিক্ত সুবিধা ছিল, সেটা হলো— ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলন যুক্ত হয়ে আদমজী থেকে যখন মিছিল আসত, ফলে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত লড়াইয়ে সেটি বিশাল শক্তি অর্জনে সক্ষম হয়েছিল। এই ক’দিনের আন্দোলন এখন তো কোটার ভেতরে সীমাবদ্ধ নেই। এখন ইস্যু হয়ে গেছে দুই শতাধিক মানুষের খুনের বিচার। ‘খুনী সরকার গদি ছাড়’ মানুষ এই স্লোগান দিচ্ছে।
আমি একে কখনও বিএনপি-জামাতের তাণ্ডব বলব না, কোনো কারণ নেই বলার। এটা কারা বলে? এটা বলে আওয়ামী লীগ। তারা শুধু বিএনপি-জামাতই না, আরো অনেককেই অভিযুক্ত করে, অনুপ্রবেশকারী বলে অভিযুক্ত করে এবং তাদের দলের যত কুকর্ম, সব কুকর্মের প্রসঙ্গ আসলেই বলে এটা হলো—অনুপ্রবেশকারী এবং সেটা শেখ মুজিবের আত্মীয়ই হোক আর যেই হোক। মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন অনুপ্রবেশকারী ছিল তার নাম খন্দকার মুশতাক। আমাদের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করে পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন করার চেষ্টা করেছিল। আওয়ামী লীগের নেতারা কি তখন বলেছিল এই অনুপ্রবেশকারী এসে আমাদের আন্দোলনকে বিপথগামী করছে সুতরাং আমরা মুক্তিযুদ্ধে আর অংশগ্রহণ করব না। সুতরাং এটা হলো সরকারের একটা প্রচারণা। সেই ন্যারেটিভ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা এটা করছে।
রাইজিংবিডি : তাহলে এই যে সরকারি স্থাপনায় হামলা হলো, এগুলো কারা করেছে? সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী এগুলো কি পূর্বপরিকল্পিত নাকি স্রেফ জনতার রোষানল?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : পূর্ব-পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ কীভাবে হয়? আমাকে বুঝান তো! এই আন্দোলনের স্ক্রিপ্ট, গতিপ্রকৃতি তো সরকারই নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই আন্দোলনের প্রথম পর্বেই সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, এটাকে আমরা শক্তি দিয়ে দমন করব এবং শক্তি দিয়ে দমন করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। এটা বলে ‘বাহদুরী’ নিয়েছিল এই দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সেই কথা অনুযায়ী ছাত্রলীগকে হেলমেট পরিয়ে আর হুন্ডা চালিয়ে তার গুন্ডা বাহিনী নামিয়ে দিয়েছিল হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতো। তারা ভেবেছিল ভয়ে ভীত হয়ে সাধারণ ছাত্ররা পালাবে। ঘটনা ঘটে গেল ঠিক উল্টা। আর তখনই সংঘাতের সূত্রপাত, সন্ত্রাসের সূত্রপাত। তাহলে আপনি বলুন এই সন্ত্রাস ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্মদাতা কে? তারা উন্মাদের মতো উন্মত্ত দানবের মতো কথাবার্তা বলতে শুরু করল। এটা দিয়েই প্রমাণিত হয় সরকারের এটিচিউড কী ছিল!
এভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে, এত লোককে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ইতিপূর্বে একমাত্র একাত্তর সালের কালরাত্রির যে গণহত্যা এবং ওই নয় মাসের যে গণহত্যা হয়েছে এর বাইরে আমরা কোনো সময় দেখতে পাইনি। আন্দেলনকারী পক্ষের উপর যখন হামলা হয় সেটার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অবশ্যই হবে। আমরা পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ করি নাই? আইয়ূব খানের বাহিনীর বিরুদ্ধে হকি স্টিক নিয়ে পাল্টা আমরা হামলা চালাইনি? আমরা হরতাল করার সময় পাথর নিয়ে ঘুরি নাই? আমরা এরশাদের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন করেছি তখন একটা শব্দ আলোচিত ছিল; শব্দটা হলো সাউন্ড ইফেক্ট। মানে আগের দিন সন্ধ্যায় সব ককটেল ফাটাতে হবে। গণআন্দোলন যখন তার সমস্ত শক্তি নিয়ে অগ্রসর হয় তখন যদি কেউ বাধা দেয়ার চেষ্টা করে অবধারিতভাবেই পাল্টাবাধা আসবে সেখানে, লড়াই হবে সেখানে। সরকারের পক্ষ থেকে তার বয়ানে বলা হচ্ছে— বিটিভি আক্রমণ করা হলো কেন? ইন্টারনেট আক্রমণ করা হলো কেন? আমার পাল্টা প্রশ্ন, ছাত্রদের মিছিল প্রতিহত করার জন্য শত শত পুলিশ পাঠানো হয়, অথচ সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর এতটুকু দক্ষতা নেই যেসব জায়গাগুলো সেনসেটিভ সেগুলো সুরক্ষিত রাখার!
রাইজিংবিডি : আদালতের অজুহাত দেখিয়ে কোটা সংস্কারে সরকারের এই দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : কোটা নিয়ে সরকার একটা সাংঘাতিক খেলা খেলেছিল এবং যার কোন যুক্তি নেই। আমাদের সংবিধানে কোটার সুযোগ করে দেয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা আছে। সেটা হলো যুগ যুগ ধরে যারা পিছিয়ে পড়া সমাজের অংশ তাদের অন্যদের সমান পর্যায়ে নিয়ে আসতে হলে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এটাকে ইংরেজিতে বলে পজেটিভ ডিসক্রিমিনিশান কিংবা এফারমেটিভ অ্যাকশান। সুতরাং যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তাদের জন্য এই কোটা সুবিধা দিতে হয়। এটার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান, তাদের নাতি-নাতনির তো সম্পর্ক নেই। সরকারের বক্তব্য মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর জন্য তাদের এই কোটা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে সমাজতন্ত্র থেকে দূরে সরিয়ে লুটপাটতন্ত্র, পুঁজিবাদে নিয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে মুক্তিযুদ্ধের সবগুলো মূলমন্ত্রকে ধ্বংস করে তারপরে কোটা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর কথা বললে আমাদের গ্রাম্য ভাষায় যেটা বলে- গরু মেরে জুতা দান। যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করতে হয়, তার একটিই অপরিহার্য উপায় হলো— দেশকে সমাজতন্ত্রের অভিমুখী ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে, দেশকে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে, গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে এবং একত্ত্ববাদী ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। এখনকার এটাই হলো সবচেয়ে বড় ইস্যু।
সরকার একটা দর্শনের ভিত্তিতে দেশ চালাচ্ছে এখন। তারা বলছে উন্নয়ন চাই। উন্নয়ক কার স্বার্থে, কার পকেটের টাকা দিয়ে উন্নয়ন, তার বেনিফিশিয়ারি কে? তারপর তারা বলছে, উন্নয়ন করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চাই। এটাও সহ্য করা যায়। কিন্তু তৃতীয় কথাটাই হলো মারাত্মক- সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা চাই। এর মানে চিরদিন দরকার আওয়ামী লীগের সরকার। সুতরাং এই ফর্মুলা অনুযায়ী সামরিক, বেসামরিক প্রত্যেকটা মানুষকে তাদের অঙ্গপ্রতঙ্গ এবং তাদের পেটুয়া কর্মীবাহিনী টাকা দিয়ে লালিত বাহিনীকে তাদের প্রত্যেককে এই অনুযায়ীই মোটিভেট করা হয়েছে। সব মরে যাক, এক হাজার মানুষকে গুলি করে মেরে ফেল তবুও উন্নয়ন লাগবে। উন্নয়নের জন্য ক্ষমতা ছাড়া যাবে না। যেভাবেই হোক ক্ষমতা ধরে রাখাই হচ্ছে আসল কারণ।
রাইজিংবিডি : সরকার বলেছে, প্রতিটা হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে। অপরদিকে হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হলো।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : কোনো মানুষ সরকারকে বিশ্বাস করে না এবং সরকার যেখানে খুনী, সেই খুনীকে যদি দায়িত্ব দেয়া হয় খুনের বিচার করো, তাহলে ন্যায়বিচার যে আসবে না সেখানে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। যার জন্য আমরা সরকারের এই ঘোষণার উপর আস্থা রাখতে পারি নাই। আমরা গণতদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তারা কার্যক্রম শুরু করেছে। সমস্ত জনগণের কাছে আমরা আহ্বান জানিয়েছি যত তথ্য আছে আপনারা সেগুলো দেন। এবং তথ্যের কোন অভাব হবে না। এই গণতদন্ত কমিটি জনগণের পক্ষ থেকে আস্থাশীল এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে করা হয়েছে। এর আগে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে এরকম কমিটি করা হয়েছিল।
রাইজিংবিডি : মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা প্রায়ই শোনা যায়। এই প্রজন্ম কি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা অনুধাবন করতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : আগেই বলেছি কোটা হলো সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য। পিছিয়ে পড়া সমাজের অংশকে অন্যদের সমান পর্যায়ে নিয়ে আসতে হলে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা। এর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-নাতনীর সম্পর্ক নেই। এটা ছিল ৭২ সালে, যখন আমরা দেশ পরিচালনা শুরু করলাম। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করেছি। সেখানে কৃষক-শ্রমিক ছিল ৭৫ শতাংশের বেশি। এবং এই প্রগতির চেতনা নিয়ে কীভাবে দেশ আমরা গড়ে তুলব তার স্বপ্ন কিন্তু আমরা যুদ্ধ করতে করতেই রচনা করেছিলাম। তাহলে যারা স্বপ্ন রচনা করল সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব কি তাদেরকেই দেয়া উচিত নয়? আর এ কথা উপলব্ধি করে তাজউদ্দিন সাহেব; তখনও বঙ্গবন্ধু ফেরেননি, তিনি বললেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারাই দেশ গড়ে তুলবে এবং সমস্ত মিলিশিয়া ক্যাম্পে আপনারা মুক্তিযোদ্ধারা নাম লেখান। সেখানে সব শ্রেণীর মুক্তিযোদ্ধারাই রয়েছে এবং সেখান থেকেই দেশ পরিচালনার লোক বের করা হবে।’
বঙ্গবন্ধু আসার পর সেটা ক্যানসেল করে দিল। পুরানো পার্লামেন্টারি সিস্টেমের ধারাবাহিকতায় এই দেশ পরিচালনা হবে বলে তিনি নির্দেশ দিলেন। এটি শুধু যে পুরনো পেনালকোড তাই-ই না, সেই পুরানো আমলাতন্ত্র। সেই পাকিস্তানের ট্রেনিংপ্রাপ্ত, সেই ব্রিটিশের ট্রেনিংপ্রাপ্ত। তাদের নিয়েই দেশ চালানোর পদক্ষেপ নেয়া হলো। আমরা কমিউনিস্ট পার্টি এবং অন্যান্য বিপ্লবী পার্টি দাবি করেছিলাম এখন অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের মাধ্যমে সরকার পরিচালনা করা হবে। তারপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় দেশকে যখন আমরা একটা অবস্থায় নিয়ে যাব, এক বা দুই বছরের মাথায়, তখন ইলেকশন দিয়ে আপনি ইলেক্টেড হতে পারবেন। আমাদের সেই কথা রাখা হয়নি। যার ফলে পাকিস্তানের কন্টিনিউটির উপর নির্ভর করে দেশ চলেছে। কিন্তু আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম পাকিস্তানি সরকার ব্যবস্থা ডিসকন্টিনিউ করার জন্য।
রাইজিংবিডি : যে জাতীয়তাবাদী ভাবনা থেকে আমরা ভাষা আন্দোলন করেছি, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সে জাতীয়তাবাদ আজ মৃত্যুমুখী। আপনি কি এটাকে মৃত্যুমুখী মনে করেন, নাকি আসলে এর চাওয়া এবং ধরন পাল্টে গেছে?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : ‘জাতীয়তাবাদ’ শব্দটাতে আমার আপত্তি আছে। ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, আমরা জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ভাষা আন্দোলন বা অন্যান্য আন্দোলন করিনি। আমরা দেশপ্রেমের ভিত্তিতে করেছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ একটা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছিল না। এটা ছিল জাতীয় মুক্তির আন্দোলনের ধারার একটা সংগ্রাম। যেটার প্রধান শত্রু হলো সাম্রজ্যবাদ, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ এবং আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে আমরা স্বাধীন আত্মনির্ভরশীল পথে অগ্রসর হতে চেয়েছিলাম।
রাইজিংবিডি : আমাদের সংবিধানের একটি নিগৃহীত স্তম্ভ সমাজতন্ত্র। আমরা কি সেই বৈষম্যহীন সমাজের দিকে এগুতে পারব? গত বিশ বছরে বর্তমান সরকার কি এই স্তম্ভটিকে বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী ছিল?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : শুধু নিগৃহীতই নয়, এটি পরিত্যক্ত এবং শুধু পরিত্যক্তই নয়, দেশকে এর বিপরীত ধারায় পরিচালিত করা হয়েছে। পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগ একটা পোস্টার ছাপিয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের ম্যাপের উপর গরু ঘাস খাচ্ছে আর পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ দুধ দোহন করছে। নিচে লেখা ছিল— পূর্ব বাংলার সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করা হচ্ছে। আমি শেখ হাসিনাকে সেই পোস্টারের কথা স্মরণ করিয়ে বলেছিলাম, এখন আপনার আমলে ১৬ বছরে এগারো লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এরপর তো আরো কত পাচারের ঘটনা ঘটেছে। কেউ খাবে আর কেউ খাবে না তা হবে না, তা হবে না— অনেক সময় শেখ হাসিনাও এই স্লোগান দিয়েছেন। এখন লুটপাটের রাজত্ব। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির কোন্দল প্রথমত এই লুটপাটের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে। বিএনপিও চেয়েছিল ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। ইতিহাস বলে এই সফলতা কখনও স্থায়ী হয় না।
রাইজিংবিডি : ২০০৭ সালের আগস্ট ছাত্রবিদ্রোহ বা অন্য আন্দোলনে ছাত্র ইউনিয়ন একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। সেই সময় ছাত্র ইউনিয়েনের প্রেসিডেন্ট মানবেন্দ্র গ্রেফতারও হয়েছিল। এবারের আন্দোলনে তাদের ভূমিকা আমরা খুব একটা দেখিনি।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : আমি আপনার সাথে একমত না। শিক্ষার্থীদের স্লোগানগুলো কে শুধরিয়ে দিচ্ছে? ‘মুক্তিযুদ্ধা কোটা বাতিল করো’ এই স্লোগানের পরিবর্তে সংস্কারের প্রসঙ্গটি কারা সামনে আনল? সব কিছুতে কি সরাসরি আন্দোলনে থাকতে হয়? ছবি তুলে প্রমাণ করিয়ে দিতে হয়? দেয়ালে দেয়ালে যে বিকল্পের কথা লেখা হলো বা হচ্ছে— এটা কার অবদান? এই বামদেরই অবদান। আমারাই তো এতোদিন প্রধান বুর্জোয়া দলগুলোর বিকল্প চেয়েছি।
রাইজিংবিডি : সম্প্রতি জামায়াতে ইসলাম নিষিদ্ধ হয়েছে। আপনার মন্তব্য কী?
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : এটা একটা অহেতুক বিষয়। জামায়াতে ইসলাম ১৯৭২ সালেই নিষিদ্ধ হয়েছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল দেখুন। সেখানে শুধু পাকিস্তানিরাই না, তাদের সকল সহযোগীরাও আত্মসমর্পণ করেছে। আ. লীগের রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কারণে, জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক ইকুয়েশন মেলানোর জন্য জামায়াতে ইসলামকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিলো। সুযোগটাকে প্রতিহত করার বদলে আ. লীগ অতীতে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে জামায়াতকে আরও কাছে টানার। এখন জামায়াতে ইসলাম নিষিদ্ধ করলে কাজ হবে? তার যে ফাইন্যানসিয়াল সোর্স, চ্যানেল অব রিক্রুটমেন্ট, কালচারাল পেনিট্রেশান— সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। আমরা একাত্তরের পর থেকে একটা বড় অপরাধ করেছি, আমাদের তখন থেকেই একটা কালচারাল-আইডিওলজিক্যাল রেভ্যুলেশন করা উচিত ছিল।