প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে গতকাল সোমবার হাজার হাজার মানুষ বগুড়া শহরে উৎসব শুরু করেন। এ সময় কিছু উত্তেজিত জনতা বগুড়া সদর থানা, সদর ফাঁড়ি, ট্রাফিক পুলিশ কার্যালয়, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং পিবিআই কার্যালয় আগুনে পুড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় নিরাপত্তার কারণে বগুড়া সদর উপজেলার পুলিশ সদস্যদের পুলিশ লাইন্সে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বগুড়া শহর ঘুরে দেখা গেছে, জেলা পুলিশের কোনো কার্যক্রম নেই। শহরের যানজট নিরসনে কাজ করছেন শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে। এমনকি পুলিশ সুপার কার্যালয়েও ঝুলছে তালা।
বগুড়া শহরের সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা রেমি খাতুন জানান, এই মুহূর্তে দেশ খুব সংকটকাল পাড়ি দিচ্ছে। এখন চারদিকে লুটপাটের গুজব শোনা যাচ্ছে। আন্দোলকারীদের মাথায় কাঁঠাল রেখে দুষ্কৃতকারীরা অগ্নিসংযোগ করছেন। এটা ভয়াবহ। দুষ্কৃতকারীদের কারণে বগুড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে পুলিশের কার্যক্রম না থাকা শঙ্কার। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনকে দেখতে হবে।’
মিজানুর রহমান নামে অপর একজন বলেন, ‘রাজাবাজার এলাকায় যাওয়ার পথে যানজটে পড়েছিলাম। আমি সাতমাথায় এসে দেখি, পুরো চত্বর রিকশা আর মোটরসাইকেল দিয়ে ভর্তি। একজন শিক্ষার্থী লাঠি হাতে যানযট ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। সে একা আর কতই পারবে? যদি এখনই প্রশিক্ষিত বাহিনী দায়িত্ব না নেয় তাহলে সংকট বাড়তে থাকবে।’
রাজাবাজার এলাকার মুদি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত আমি অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থেকে পালাক্রমে বাজার পাহারা দিয়েছি। নিজেদের দোকান ও সম্পত্তি রক্ষায় সজাগ ছিলাম আমরা। থানায় পুলিশ না থাকার সুযোগটি নিয়ে একশ্রেণির দুষ্কৃতকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।’
বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর পদমর্যদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সদর থানায় দফায় দফায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ফাইলপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা সদরের পুলিশ এখন নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। ১১টি উপজেলার পুলিশ সদস্যরা নিজ নিজ কর্মস্থলে রয়েছেন।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বগুড়া জেলা শাখার সদস্য সচিব দিলরুবা নূরী বলেন, দেশের এমন পরিস্থিতিতে কাকে কী বলব? এখন তো দেশে কার্যত কোনো সরকার নেই। অন্তর্বর্তী সরকার এখনো গঠন হয়নি। কার কাছে দাবি করব? এই পরিস্থিতিতে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শহরের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছি। বিকেলে একটি মিছিল করব। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায়।’