খেলাধুলা

বিসিবিতে সরকার পতনের হাওয়া

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ছিল অক্ষত। কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ছাড়া কিছু ঘটেনি। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিন দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। 

মঙ্গলবার (০৬ আগস্ট) সকালেই বিসিবিতে আসতে থাকেন এতদিন ধরে উপেক্ষিত, কোণঠাসা হয়ে থাকা বিরোধী দলের ক্রীড়া সংগঠকরা। সঙ্গে ছিল দলীয় লোকবল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তাদের কলরব। 

নেতৃত্বে ছিলেন বিসিবির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবু। 

এ ছাড়া ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল, ক্রীড়া সংগঠক তরিকুল ইসলাম টিটু প্রমুখ সম্মুখ সারিতে ছিলেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটার নুরুল হাসান সোহান ও মুমিনুল হককেও বোর্ডে দেখা গেছে এদিন।

 

তাদের দাবি বোর্ড চলে একচ্ছত্র ক্ষমতায়, দুর্নীতি হচ্ছে ব্যাপক। যেখানে কোনো ক্রীড়া সংগঠক নেই, তারা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বোর্ড চালানোর জন্য সংকেত দিয়ে গেছেন। গণমাধ্যমে টিটু এমনটাই জানিয়েছেন। 

‘আপনারা জানেন এটা স্বৈরাচারি সরকারের পতন হয়েছে। এখন দেশে কোনো প্রধানমন্ত্রী নেই, হয়তোবা এক দুদিনের মধ্যে দেশে একটা সরকার গঠন হবে। তার আগে আমরা আসলে কোনো কিছু করতে চাচ্ছি না। আমরা রাজনৈতিক মুখ না, আমরা স্পোর্টস অর্গানাইজার। এখানে যারা আছি, সবাই স্পোর্টসের সঙ্গে ছিলাম। আপনারা দেখেছেন, এর আগে যারা এখানে কাজ করেছে, একটা স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়ে ক্রিকেট বোর্ড পরিচালিত হয়েছে। ক্রিকেটের কোনো অর্গানাইজার ছিল না।’

‘কিন্তু আমরা যখন ছিলাম, আমরা চেয়েছিলাম আমরা চেষ্টা করেছি সমস্ত অর্গাইনাইজারদের এখানে। এখন বোর্ড যেভাবে আছে, সেভাবেই চলবে। আমরা আসার আগে প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম, কিন্তু উনি আসেননি। কেন আসেননি, জানি না। আমরা এখন বর্তমান যে সফরগুলো আছে ওগুলো চলমান থাকবে, যেহেতু সরকার নেই বোর্ড কেউ নেই। এখন স্টাফ যারা আছে, তাদের দায়িত্ব দিয়েছি, তারা এখন বোর্ডটা পরিচালনা করবে। যতটুকু করার দরকার, তার চেয়ে বেশি করবে না। পরবর্তীতে সরকার গঠন হলে আমরা একটা চিন্তা করব।’

রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপ হয় দেবব্রত পালের। তিনি মুঠোফোনে জানিয়েছেন, চলমান মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত বোর্ড ভাঙা-গড়া নিয়ে কোনো চাপ প্রয়োগ করবেন না। তবে স্বচ্ছতার সঙ্গে চলতে হবে, এমন একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।

মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে বসবো, সবকিছু নিয়ে জবাবদিহিতা চাইবো। সমস্যা মনে হলে যেখানে বলার সেখানে বলা হবে। আমরা চাই ঠিকভাবে সব চলুক। সবগুলো সফর হোক, ক্রিকেট খেলা নিয়ে যাতে কোনো সমস্যা না হয়।’

এদিন সরব উপস্থিতি ছিল সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশার সুমন।  দুজনে আছেন ভিন্ন দায়িত্বে। বর্তমানে নারী ক্রিকেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা বাশার রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন, তিনি এসেছেন নারী ক্রিকেটের সামনের গুরুত্বপূর্ণসূচি গুলোর বিষয়ে আলোচনা করতে। 

নান্নু বলেন, ‘এখন সবার সহযোগিতায় আমাদের ক্রিকেটটাকে চলমান রাখতে হবে। আমাদের যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলো আছে, এ টিমের সফর আছে, সামনে পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ আছে। এগুলো যেন সময় মতো হয়,এজন্য আমাদের সবার সহযোগিতা দরকার এবং এখানে সুন্দরভাবে সবার সহযোগিতায় ক্রিকেটটাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। এখানে কারোর দ্বিমত নেই, সুতরাং এখানে আমাদের সবার সহযোগিতা দরকার আমরা ক্রিকেটটাকে ভালো মতে এগিয়ে নেব, এটা আমাদের দায়িত্ব।’

বাশার বলেন, ‘আমার বিশ্বাস দ্রুতই এটা কেটে যাবে। হয়তো কয়েকদিন হয়নি, আসা করি হয়ে আবার শুরু হয়ে যাবে। আশাবাদি যে যে প্রোগ্রামগুলো আছে ওগুলো শুরু হয়ে যাবে। কারণ, আমাদের সামনে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমাদের খেলা আছে, বিশ্বকাপ আছে, জাতীয় দলের সফর আছে, আশা করছি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমরা নতুন ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছি।’