সাতসতেরো

স্থপতি থেকে সফল ফ্যাশন ডিজাইনার মুসাররাত নওশাবা

একাডেমিক্যালি তিনি একজন স্থপতি। নেশায় নকশাকার। স্থপতি হিসেবে বছর দেড়েক দুটি ভিন্ন স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পর, স্বাধীনভাবে নিজের পছন্দের কাজ করার উদ্দেশ্যে চাকরি ছেড়ে বেছে নেন উদ্যোক্তা জীবন। বলছি ফ্যাশন হাউস ঋতি’র স্বত্বাধিকারী মুসাররাত নওশাবার কথা।

ঋতি’র যাত্রা শুরু ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। শাড়ি, পাঞ্জাবি, কাস্টোমাইজড ফ্যামিলি কম্বো ঋতি’র মূল পণ্য। ঋতি’র পোশাকগুলো বেশিরভাগ প্রিন্ট মাধ্যমেই তৈরি। এ ছাড়া প্রিন্টের সঙ্গে ফিউশনও করে থাকে।

মুসাররাত নওশাবা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘যাবতীয় ক্লদিংয়ের প্রিন্ট মাধ্যম যেমন উড ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট ও ডিজিটাল প্রিন্ট নিয়ে কাজ করছি। তবে বেশ কিছু ফিউশন কাজও করা হয়েছে। যেমন উড ব্লকপ্রিন্টের সাথে হাতের কাজ।’

এসব কাজ করতে গিয়ে অনেকের সহযোগিতায় নিয়ে থাকেন নওশাবা। ঋতি’র শাড়ি, পাঞ্জাবির উড ব্লকপ্রিন্ট আর হাতের কাজের সাথে জড়িত প্রায় ১০-১২ জন পুরুষ ও নারী। 

ঋতি’র যাত্রা ২০০০ সালে হলেও মুসাররাত নওশাবা কাজ শুরু করেছিলেন ২০১৭ সাল থেকে।

তিনি বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু ২০১৭ সাল থেকে। সে সময় গড়ন নামে পার্টনারশীপে আরেকটা দেশীয় ক্লদিং নিয়ে কাজ করতাম। আমাদের পারষ্পরিক বোঝাপড়ায় উদ্দোগটি বন্ধ করা হয় ২০১৯ সালে।’

ঋতির বেশীরভাগ শাড়ি দেশীয় তন্তুর তৈরি। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জের তাঁতিদের শাড়ি ঋতির মূল মাধ্যম। তবে, টিস্যু বা অর্গাঞ্জায়ও নিজস্ব ডিজাইনে কাজ  করেন নওশাবা। তাঁতিদের বোনা শাড়ি আর প্রিন্টের কর্মীরাই নওশাবার বড় সহযোগী। ডিজাইন থেকে কাপড় আনা, কাপড়ে প্রিন্ট শেষে ডেলিভারি পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন মুসাররাত নওশাবা। তবে কাস্টমার বা ক্রেতা ডিল করার ক্ষেত্রে একজন পেইজ মডারেটরের সহযোগিতা নেন তিনি।

নওশাবা বলেন, ‘কাস্টমার ডিল এক সময় আমিই করতাম। বর্তমানে একজন মডারেটর আমাকে সহযোগিতা করেন। শুরু থেকেই আমরা ভোক্তাদের সাথে ‘বিনয়’ ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। আর তাই হয়তো ঋতি’র বেশকিছু পার্মানেন্ট ক্লায়েন্ট বেইজ আছেন। যারা প্রতি উৎসবে চোখ বুজে আমাদের ওপর ভরসা রাখেন। তবে একটা কথা বলতেই হয়, ঋতির কাস্টমার ডিল করে আমার ধৈর্য্য অনেক বেড়েছে।’ 

ঋতির প্রচার, প্রসার ও বিক্রির জন্য ‘ঋতি – Rreeti) পেজটি ব্যবহার করা হয়। 

ঋতি’র পণ্য ক্রেতারা কেন পছন্দ করেন মুসাররাত নওশাবা বলেন, নকশায় ভিন্নতা রাখার চেষ্টা করি। কিছুটা ভিন্নমাত্রায় ডিজাইন হওয়ায় কাস্টমাররা পণ্য পছন্দ করেন। এটাই শান্তি। তাছাড়া, শুরু থেকে কোয়ালিটিফুল পণ্য রাখার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর আমরা। তাই চাপ থাকলেও ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা হয়নি কখনো।

তিনি আরও বলেন, ‘ভালো সার্ভিস দেয়ায় অনেক কাস্টমার আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড হয়ে গেছেন। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের খাতিরে আমরা নিয়মিত আলাপ চালাই। আবার এমনও হয়েছে মেলা বা এক্সিবিশন করতে গেছি, ওখানে কাস্টমার আমার জন্য উপহার নিয়ে এসেছেন। আদরে জড়িয়ে ধরেছেন, যেন আমি তাদের কত প্রিয়। এগুলো সত্যিই অর্জন মনে হয়।’

মাত্র ১৫ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করেছিলেন নওশাবা। বর্তমানে এমন অবস্থা যে কোনো কোনো উৎসব কেন্দ্র করে ৪-৬ লাখ টাকার পণ্যও বিক্রি করেন তিনি।

মুসাররাত নওশাবা জানান, ক্লদিংয়ে সিজনাল ব্যবসা হয়। তবে কোনো কোনো সিজনে ৪-৬ লাখ টাকার পণ্যও বিক্রি হয়। বাজার ভর্তি বিদেশি কাপড়ের ভীড়ে দেশি কাপড়ের একটা ক্ষুদ্র উদ্যোগের এমন সেল হওয়া তার কাছে খুব ইতিবাচক লাগে।

শুধু আর্থিক সফলতা নয় এই পেশায় তিনি তার স্বাধীনতা পেয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন বলে হিসেবে স্বস্তিও বোধ করেন।

উৎসাহ কোথায় পান নওশাবা বলেন, ঋতিতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারি এটা ভীষণ আনন্দের ব্যাপার। নিজের নকশা করা শাড়ি সবার যখন পছন্দ হয় তখন আলাদা আত্মতৃপ্তি হয়। এটাই আমার ভেতরে থাকা ছিঁটেফোঁটা মেধার স্বীকৃতি। শুরুতে আত্মবিশ্বাস নিজেকেই যোগান‌ দিতে হতো। তবে এখন আমার আত্মবিশ্বাস, আমার সমস্ত সাহস আমার কন্যা। ছোট্ট এই মানুষটা আমাকে অনেক উৎসাহ জোগায়। আমি যাই ডিজাইন করি, তৈরি হওয়ার পর কারখানা থেকে বাসায় আনলে ও দেখে, প্রশংসা করে অথবা মাঝেমাঝে বলে 'মা এই শাড়িটা আরো একটু ভালো করে করলে ভালো হতো'। ওর ম্যাচিউর আলোচনা আমাকে উৎসাহ জোগায়। ও পাশে থাকাতে আমি স্বস্তি বোধ করি।’