সারা বাংলা

বরিশালে বাজার দরে ধোঁকা খাচ্ছেন ক্রেতারা

কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাজারে নিত্যপণ্যের দামের একটি তালিকা ঘুরপাক খেলেও তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। হাতে গোনা দুই-একটি সবজির দাম কমলেও কমেনি মুদি পণ্য ও মাংসের দাম। গত এক সপ্তাহে বেড়েছে চালের দামও। ক্রেতারা বলছেন, ফেসবুকে বাজার দরের তালিকা দেখে পণ্য কিনতে এসে ধোঁকা খাচ্ছেন তারা।  

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেনাবাহিনী দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে এমন দাবি করে গত কয়েকদিন ধরে নিত্যপণ্যের একটি মূল্য তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। নির্ধারিত দামের বাইরে কাউকে পণ্য না কেনার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। সেই তালিকার সঙ্গে বাজারে বিক্রি হওয়া পণ্যের দামের মিলতো নেই, বরং বেশিরভাগ পণ্যই আগের দামে বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। 

শনিবার (১০ আগস্ট) নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা, বাংলাবাজার, নতুন বাজার ও সাগরদী বাজার ঘুরে জানা গেছে, অধিকাংশ সবজি আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে কমেনি সবজির দাম। সবচেয়ে আলোচিত কাঁচা মরিচ বাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে ২৮০ টাকা কেজি দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগে এই সবজির দাম ছিলো ২৪০ টাকা কেজি। বাজারগুলোতে আগের দামেই ঝিঙা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে।

এছাড়া, কাকরোল প্রতিকেজি ৮০ টাকা, শসা প্রতিকেজি ৪০ টাকা, রেখা (চিচিঙ্গা) প্রতিকেজি ৪০ টাকা, বেগুন জাত ভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের।

বাজারে ঢেড়স প্রতিকেজি ৬০ টাকা, চায়না গাজর ২০০ টাকা কেজি, ভারতীয় টমেটো ২০০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৭০ টাকা কেজি, বরবটি ৭০ টাকা কেজি ও পাতাকপি ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। তবে, গত কয়েক দিনের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম কমে পটল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। পেপে ৪০ টাকা কেজি ও করলা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। লাউ বিক্রি হতে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পিস দরে। 

চৌমাথা বাজারের খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ী শাহিন হাওলাদার বলেন, ‘কারফিউর সময় গাড়ি না আসায় এবং পণ্য সরবরাহ কম থাকায় কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মৌসুম থাকলেও অধিকাংশ সবজি মেহেরপুর ও যশোর থেকে আসায় দাম একটু বেশি রাখা হচ্ছে। আমাদের অঞ্চলে যদি সবজির পর্যাপ্ত আবাদ হতো তাহলে দামও অনেকটা কমতো। আমরা প্রতিটি পণ্যে কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকা লাভ করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাইকারি বাজারের ওপর নির্ভর করে সবজি খুচরা বাজারে কতো টাকা দরে বিক্রি হবে।’   

এদিকে, মুদি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অপরিবর্তীত থাকলেও বেড়েছে চালের দাম। শনিবার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে কেজিতে ২ টাকা বেড়ে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। বালাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। বাজারে মসুর ডাল কেজিতে বিক্রি হচ্ছে দেশি ১৩০ ও বিদেশি ১১০ টাকা কেজি দরে, মুগ ডাল ১৬০ টাকা কেজি, পেঁয়াজ দেশি ১১০ টাকা ও ভারতীয় ১০০ টাকা কেজি, রসুন চায়না ১৮০ টাকা ও দেশি ২০০ টাকা কেজি, আলু ৬০ টাকা, চিনি ১৩০ টাকা কেজি, সয়াবিন তেল লিটার ১৬৫ টাকা দরে। খোলা আটা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। অপরীবর্তীত রয়েছে শিশু খাদ্যের দাম। 

দ্রব্যমূল্য নিম্নমুখীর খবরকে গুজব দাবি করে চৌমাথা বাজারের মজিদ স্টোরের মালিক মো. হাসান বলেন, ‘পণ্য যেখান থেকে উৎপাদন হয় সেই জায়গার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণেও কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে।’

এদিকে, দর কমেনি সোনলী ও ব্রয়লার মুরগির। প্রতি কেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা ও ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা কেজি দরে বাজারে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গরুর মাংসের দাম ৬০০ ও খাশির মাংসের দাম ৮০০ টাকা করা হয়েছে বলে পোস্ট দেওয়া হলেও বাস্তবে তার কোনো মিল নেই। শনিবারও বরিশালের সব বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা আর খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ৯০০ টাকা দরে।

চৌমাথা বাজারে সবজি কিনতে আসা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সেনাবাহিনী বাজার দর নির্ধারণ করে দিয়েছে এমন একটি ফেসবুক পোস্ট দেখে বাজারে এসেছি। এখানে এসে দেখি প্রতিটি পণ্যই আগের দামেই বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আগেও পেঁয়াজ ১১০টাকা কেজি দরে কিনেছি। আজও সেই একই দামে পেঁয়াজ কিনলাম। বরং কাঁচা মরিচের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আধাকেজি মরিচ কিনলাম ১৪০ টাকা দিয়ে। ফেসবুকের পোস্ট দেখে ধোঁকা খেয়েছি।’

শাহেদ নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, ‘সেনাবাহিনীর নাম ব্যবহার করে যারা অপপ্রচার চালিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই প্রশাসনের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া। টমেটো আধাকেজি ১০০ টাকা, পেপে এক কেজি ৪০ টাকা ও ঢেড়স আধাকেজি ৩০ টাকা দিয়ে কিনলাম। রসুন আধাকেজি ৯০ টাকা ও চার কেজি আলু কিনলাম ২৪০ টাকা দাম দিয়ে।’ 

গত দুইদিন ধরে বরিশালের বিভিন্ন কাঁচা বাজার মনিটরিং করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। তারা বিক্রেতাদের পাইকারি ক্রয়ের মেমো পর্যন্ত যাচাই করছেন। বাজার মনিটরিংয়ে থাকা মিলন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা বাজার মনিটরিং অব্যাহত রেখেছি। কাঁচামাল বিক্রেতাদের প্রতিটি পণ্য সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ টাকা বেশিতে বিক্রির জন্য বলা হয়েছে।’