বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার অযুহাতে গত ১৮ জুলাই রাতে পাঁচটি আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রশাসন। পরে হলগুলোর ফটকে সিলগালাও করে দেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
তবে আওয়ামী সরকার পতনের পর প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে হলেই অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা। এতে করে অফিসিয়ালি বন্ধ থাকলেও বাস্তবে হল খোলাই আছে।
এদিকে, গত ১৮ জুলাই হল বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে কুমিল্লা থেকে নিকটবর্তী স্থানগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের পৌঁছে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপরই আবাসিক হলগুলো অনেকটাই ফাঁকা হতে থাকে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ছাত্রাবাসগুলোও খালি হতে থাকে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে হলগুলোতে লেগেছে প্রাণের ছোঁয়া। জনশূণ্য ক্যাম্পাস লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। হলের ছাদ বা রুম থেকে ভেসে আসছে গানের সুর। আবার সেই সুরের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছেন অনেকে।
শনিবার (১০ আগস্ট) সকাল হতেই দেখা যায় পত্রিকার স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে খবর পড়তে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। আবার কেউ যাচ্ছেন বই হাতে রিডিং রুমে। সন্ধ্যা হলেই হলগুলোর প্রতিটা রুমে এখন জ্বলে উঠছে বৈদ্যুতিক বাতি। যেন আঁধার শেষে ধারণীতে এসেছে ভোর।
অবশ্য সরকার পতনের পরপরই ছাত্রদলসহ কতিপয় দুষ্কৃতকারী গোষ্ঠী হলগুলোর বিভিন্ন রুমের তালা ভেঙে দখলে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে গত বুধবার (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় রোববার (১১ আগস্ট) সকালে হলগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সোমবার (১২ আগস্ট) থেকে অনলাইনে এবং আগামী ২৫ আগস্ট থেকে পুরোপুরি সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ক্যাম্পাসের আশেপাশে ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে বাসযোগে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। তবে শনিবার (১০ আগস্ট) সকাল থেকে অনেক শিক্ষার্থীকে হলগুলোতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। দীর্ঘদিন পর হলে ফিরে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় তাদের। তবে ট্রেন সার্ভিস বন্ধ থাকায় অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের।
বিজয় ২৪ (পূর্বনাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, এতদিন ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা নানান সমস্যায় জর্জরিত ছিল। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা বন্ধু-বান্ধবের মেসে কষ্ট করে থেকেছেন। কেননা, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। তাই তারা বাড়ি যাননি। এখন আবাসিক হলগুলো খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা হলে আসতে শুরু করছেন।
তিনি বলেন, কাল থেকে ক্যাম্পাসে আবার প্রাণ ফিরবে। আমাদের এখন প্রত্যাশা, অতিদ্রুত অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হবে। আমরা আর সময় নষ্ট করতে চাই না। অনতিবিলম্বে শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক দাবি পূরণের মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হোক সেটাই চাই।
সুনীতি-শান্তি (পূর্বনাম শেখ হাসিনা) হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মুন্নী আক্তার হালিমা বলেন, আমাদের হল দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার পর খোলা হয়েছে। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হলেই কেমন আছিস? ভালো আছিস? এসব শব্দ শুনতেই ভালো লাগে। ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন স্বাধীন এ দেশে সবাই মুখে হাসি নিয়ে চলতে পারবে, হলগুলোতে বিরাজ করবে প্রশান্তি। এই সংকটে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সচল থাকুক এটাই প্রত্যাশা।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইমন আকন্দ বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। সদ্য স্বাধীন দেশে আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীরাও স্বাধীন থাকুক। ক্যাম্পাসে আমি নিরাপদ আছি। ধীরে ধীরে হলে বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। অনেকদিন পর ক্যাম্পাসে আবারও বন্ধুদের সঙ্গে একত্র হতে পেরে খুব লাগছে। গল্প, গান আর খুনসুটিতে জমে উঠে আমাদের আড্ডা। শান্তি ও স্বাধীনতা বজায় থাকুক আমাদের হলগুলোতে। কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি তৈরি না হোক। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু হলে আমরা পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারবো।