ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় চাকরির দাবিতে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) সামনে সোমবার (১৯ আগস্ট) দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। ফলে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের দুই পাশে ৫ কিলোমিটার জুড়ে যানজট দেখা দেয়। দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা।
এদিকে, নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিইপিজেডের ভেতরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। বিক্ষেভের কারণে ইতোমধ্যে স্থানীয় কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কৃর্তপক্ষ।
আরও পড়ুন: ডিইপিজেডের সামনে চাকরিপ্রত্যাশীদের বিক্ষোভ, সড়কে যানজট
স্থানীয়রা জানান, গতকাল রোববারের মতো আজ সকালের দিকে শতাধিক চাকরিপ্রত্যাশী ডিইপিজেড এলাকায় জড়ো হন। তারা সড়কের ওপর বাঁশ ফেলে রেখে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। ফলে মহাসড়কের উভয় দিকে অন্তত ৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল ১১টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। এর ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আন্দোলনকারীরা আবারো সড়কে অবস্থান নেন। বিকেল ৩টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান।
তারা আরও জানান, ভোরের দিকে ডিইপিজেডের সামনে কিছু চাকরিপ্রত্যাশী অবস্থান নেন। সকালের দিকে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গেলে তাদের মূল ফটকে আটকে দেওয়া হয়। কয়েকজনকে মারধরের ঘটনাও ঘটে। তারা নতুন ডিইপিজেডের কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষীকেও মারধর করে। যারা মারধর করেছেন তাদের অনেকের হাতে লাঠি ছিল।
ডিইপিজেডের কর্মকর্তারা জানান, গতকালের বিক্ষোভের জেরে কয়েকজনকে সিভি দিতে বলা হয়। অনেকেই দিয়েছেন। তবে কেউ কেউ সিভি ছাড়া তাৎক্ষণিক নিয়োগ দিতে বলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী আন্দোলনকারী বলেন, আমরা চাকরি চাই। এখানে চাকরির দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) সারোয়ার আলম বলেন, ‘চাকরিপ্রত্যাশীদের সিভি জমা দিতে বলা হয়েছে। তারা সিভি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সকালে তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝিয়ে সরিয়ে দেই। এরপর আবারও তারা সড়ক অবরোধ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) তথ্য বলছে, ঢাকা ইপিজেডে মোট শ্রমিক সংখ্যা ৭৯ হাজার ৫৮৮ জন। এদের মধ্যে নারী শ্রমিক ৪০ হাজার ৮১৮ জন এবং পুরুষ শ্রমিক ৩৮ হাজার ৭৭০ জন। শতকরা হিসেবে ৫১ শতাংশ নারী ও ৪৯ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক।
বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) আনোয়ার পারভেজ বলেন, প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী কাজের ভিন্নতার কারণে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ইপিজেডে যোগ্যতার ভিত্তিতে শ্রমিক নেওয়া হয়। সেখানে নারী-পুরুষে ভেদাভেদ করা হয় না। কোনো প্রতিষ্ঠানে যেমন গার্মেন্টসে হয়তো নারী শ্রমিক বেশি দরকার, তাই সেখানে নারী শ্রমিক কিছুটা বেশি। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেমন সোয়েটার বা অ্যাকসেসরিজ ধরনের; সেখানে পুরুষ শ্রমিক বেশি দরকার।
চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়ে আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বেপজার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, সহনশীলতা ও সহানুভূতির সঙ্গে সুষ্ঠু সমাধানে চেষ্টা করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, একটি পক্ষের সঙ্গে যখন কথা বলা হচ্ছে পেছনেই আরেকটি পক্ষ আগেই মানি না বলে স্লোগান দিচ্ছে। একেক গ্রুপ একেক সময় একেক বক্তব্য উপস্থাপন করছে।’
আনোয়ার পারভেজ আরও বলেন, বেপজার নিজস্ব হেল্পলাইন আছে (১৬১২৮)। যেখানে শ্রমিকেরা ২৪ ঘণ্টা যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের অভিযোগ/ অনুযোগ জানাতে পারেন। বেপজা অভিযোগ আমলে নিয়ে সমাধানের করে থাকে।