শরীয়তপুরের নাড়িয়া-জাজিরা সংযোগ সড়কের র্কীর্তিনাশা নদীতে ভাষাসৈনিক গোলাম মওলা সেতুর নির্মাণ কাজ ৭ বছরে দুইবার ঠিকাদার পরিবর্তন করেও শেষ করতে না পারার অভিযোগ উঠেছে এলজিইডি'র বিরুদ্ধে।
এছাড়া, ছয় মাস আগে পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে ফেলায় স্থানীয়দের এখন ঝুঁকি নিয়ে নৌকা ও ট্রলারে নদী পারাপার হতে হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আর জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব অবহেলার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীর সঙ্গে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সড়ক পথে যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে কীর্তিনাশা নদীর ওপরে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০১৫ সালে ওই সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষে। তবে চাইলে সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে যাতায়াতের সুযোগ ছিল। নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে গত ৭ মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুরাতন ব্রিজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন থেকে দুই পাড়ের বাসিন্দারা নৌকা বা ট্রলারে করে নদী পারাপার করছেন।
শরীয়তপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৭ সালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কীর্তিনাশা নদীর উপরে ১০৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ করেন এলজিডি। ২০১০ সাল থেকে নদী ভাঙনের কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১৫ সালে সেতুটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেলে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা দেয় এলজিইডি। বন্ধ করে দেওয়া হয় ভারী যান চলাচল। নতুন সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৫ মিটার সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
নাভানা কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। কিছুদিন সেতুর কাজ করার পর নাভানা কনস্ট্রাকশন ২০১৯ সালে কাজ শেষ না করেই চলে যায়।
২০২১ সালে পুনরায় দরপত্র হয়। ১০৫ মিটার সেতুর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে করা হয় ২২২ মিটার। এ কাজের জন্য কার্যাদেশ পায় কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ। তারা ৫০ ভাগ কাজ শেষ করে। গত ৯ জুন কাজের মেয়াদ শেষ হয়। ৫০ ভাগ কাজের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তুলে নিয়েছে ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, পদ্মা সেতুর আগে এই সেতুর কাজ শুরু হয়। তবে গোলাম মাওলা সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় পদ্মা সেতুর সুফল থেকেও নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস থেমে যাচ্ছে সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে। দুই উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করতে হচ্ছে ভেঙে ভেঙে। অন্যদিকে সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে বসবাসকারীরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মুমূর্ষু রোগী নিয়ে তাদের দীর্ঘ পথ ঘুরে যেতে হয়। ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদেরও। উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ নিয়ে বিপাকে পড়েন কৃষকরা।
কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সেতুটির নির্মাণকাজ করছেন ঠিকারদার আব্দুল ওহাব। তিনি মুঠোফোনে বলেন, প্রকল্পের মূল সমস্যাগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে না কেউ। সেতুটির প্রাথমিক ডিজাইন সঠিক নয়, তাই পাইল করার পর নতুন ডিজাইন তৈরি করতে হবে। সয়েল টেস্টের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। প্রকল্পটির প্রাথমিক সময়সীমা আড়াই বছর থাকলেও, সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে আরও ছয় মাস লাগবে, ফলে কাজ শেষ হতে চার বছরের বেশি সময় লাগবে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম রাফেউল ইসলাম বলেন, ‘পিলার নির্মাণে কিছুটা জটিলতা থাকলেও সাত বছরে ৫০-৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে এক বছর সময় লাগবে। ২০১৭ সালে নিযুক্ত ঠিকাদার কাজ শেষ না করায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন ঠিকাদারকে দ্রুত গতিতে কাজের জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, মানুষদের যাতায়াতের জন্য বিকল্প ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। যা আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মূল ব্রিজের কাজটি ২০২৫ সালের জুলাই মাসের আগেই সমাপ্ত হবে।’