সারা বাংলা

‘রাষ্ট্রপিতা’কে বাতিল করতে গেলে জন্মপরিচয় থাকবে না: কাদের সিদ্দিকী

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা আর বঙ্গবন্ধু এক নন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পিতা। সংসদ বাতিল হয়েছে, উপজেলা ও পৌরসভা বাতিল হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে বাতিল করবেন? তার নাম পিতা; রাষ্ট্রপিতা। রাষ্ট্রপিতাকে বাতিল করতে গেলে সন্তানের কিন্তু জন্মপরিচয় থাকবে না।’ 

সোমবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভার তালতলা চত্বরে উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশের অবস্থা মোটেই ভালো না। আমি অধ্যাপক ইউনূসকে খুবই পছন্দ করি। তার গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে যখন বিপদ হয়েছিল, আমি বারে বারে তার কাছে গিয়েছি, তাকে সাহস দিয়েছি। শেখ হাসিনাকেও বলেছি, এরকম একটা মানুষের লেজ কাটতে গিয়ে আপনি ভালো কাজ করছেন না। তাকে আপনি সহযোগিতা করেন, সারা পৃথিবীতে আপনি তাকে ঘোরার ব্যবস্থা করে দেন, এতে আপনার লাভ হবে। কিন্তু না, ওনি তার লেজ কাটতে কাটতে এখন শেখ হাসিনার লেজই কাটা হয়ে গেছে। এখন আমার কি করার আছে?’

তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন (১৫ আগস্ট) আমার গাড়ি ভেঙেছে। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রেখেছিল। আমাকে কেউ কেউ বলছে, জামায়াত-শিবিরের লোকেরা আপনার গাড়ি ভেঙেছে। আমি বলেছি- ওদেরকে আমি চিনি, অনেকের সঙ্গেই কথা হয়েছে। ইসলামি আন্দোলন, চরমোনাইয়ের পীরেরা আমাকে ছায়ার মত রাখে, আমার তো মনে হয় না যে, জামায়াত-শিবিরের লোকেরা আমার গাড়ি ভেঙেছে। কেউ কেউ বলেছে- আপনিতো তারেক রহমানের সমালোচনা করেন, বিএনপির লোকেরা আপনার গাড়ি ভেঙেছে। আমি তাদের বলেছি- বিএনপির লোকেরা আমাকে গুরু বলে মানে ওস্তাদ মনে করে। আমি কি করে ভাববো তারা আমার গাড়ি ভেঙেছে!’ 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা আন্দোলন করেছে, তারা পৃথিবীব্যাপী একটি ইতিহাস তৈরি করেছে। কিন্তু তারা যদি এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, আজকে হাসিনার দশা যা হয়েছে, তাদের দশাও এর চাইতে কিন্তু ভালো হবে না। আমি ছাত্র বন্ধুদের যে সরলতা-সততা দেখেছি, গত ৩০ বছরে এই চোরের শাসনে তা দেখা যায় নাই। প্রতিদিন গাড়ি খুললেই টাকার বস্তা পাওয়া যায়, সব মন্ত্রীরা চোর, চুরি করার জন্য মানুষ তাদের নেতা বানায় না।’ 

এ সময় তিনি যোগ করেন, ‘সব সময় কেলিয়ে কেলিয়ে বলতেন- আমি মানুষের ভাতের অধিকার কায়েম করেছি, ভোটের অধিকার কায়েম করেছি। সব মানুষের ভোট চুরি করে তারা ভোটের অধিকার কায়েম করেছিল। তিনবার একটা মানুষে একটা ভোটও দিতে পারে নাই।’ 

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘ভাগনে জয়, বাবা তুমি যা বলো, এখানে যে মানুষগুলো আছে তাদের কষ্ট হয়। তোমার মায়ের পায়ের জুতা হয়ে যারা ছিল, তাদের এখন জীবন বাঁচে না। তুমি সকালে এক রকম আর বিকেলে আরেক রকম কথা বলে মানুষগুলোর কষ্ট আর বাড়াইয়ো না। আদব-কায়দা শেখো বড় হও। আমেরিকায় বসে কথা বললেই তাকে বড় বলা হয় না।’ 

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা জয়ী হয়েছে বলে বিএনপি গিয়ে ক্ষমতায় বসে গেছেন- এ রকম ভাববেন না। জনগণ যদি সমর্থন না করে আজকে শেখ হাসিনার যে দশা হয়েছে আপনাদেরও সেই একই দশা হবে। দেশটা আওয়ামী লীগের না, দেশটা বিএনপির না, দেশটা জামাতের না, ১৪ দলের না, এটি ১৮ কোটি মানুষের দেশ। সেই ১৮ কোটি মানুষকে সম্মান করতে শেখেন। মানুষকে যারা সম্মান করে না, তাদের রাজনীতি করার অধিকার নাই। 

জনসভায় আরও বক্তব্য দেন- উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র সানোয়ার হোসেন সজীব, উপদেষ্টা জসিম উদ্দিন, দলটির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক হিটলু, শাওন আক্তার মলিসহ অনেকে।