বাংলাদেশের সামিট গ্রুপ ভারত থেকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ আমদানির প্রাথমিক চুক্তি পুনর্বিবেচনা করার পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল, সেই কেন্দ্র থেকে ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুমতি দিয়ে নয়া দিল্লি রপ্তানি আইন সংশোধন করার পর এ ঘোষণা দিলো সামিট গ্রুপ।
ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। ১২ আগস্ট ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ মেমোতে বলা হয়েছে, একচেটিয়াভাবে প্রতিবেশী দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ২০১৮ সালে যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল তা সংশোধন করা হয়েছে। এখন থেকে আদানির নির্মিত কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতেও সরবরাহ করা যাবে।
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান রয়টার্সকে বলেছেন, ‘নীতিমালার পরিবর্তনের পর আমাদের ভারতীয় অংশীদারেরা হয়তো ভারতেই বিক্রি করতে বেশি আগ্রহী হবেন। আমাদের কোম্পানি বাংলাদেশে সঞ্চালন লাইন তৈরিতে বিনিয়োগ করবে এবং তাহলে এ ক্ষেত্রে আমাদের আরও ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে।’
সামিট গ্রুপ বাংলাদেশে এক ডজনেরও বেশি জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র পরিচালনা করছে। কোম্পানিটি গত বছর টাটা পাওয়ার রিনিউয়েবল এনার্জি লিমিটেডসহ ভারতীয় অংশীদারদের সঙ্গে ১ হাজার মেগাওয়াট পুনর্নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প নির্মাণ এবং উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে টাটা পাওয়ারের পক্ষ থেকে সামিটের পরিকল্পনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
বাংলাদেশে প্রায় ৯৯ শতাংশ বিদ্যুৎই আসে জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে। তাই কার্বন নিঃসরণ কমাতে এই খাতের ওপর থেকে নির্ভরতা কমানো বাংলাদেশের জন্য জরুরি। কিন্তু জমির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে জনবহুল বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনও সহজ নয়।
সামিট গ্রুপের সিঙ্গাপুরভিত্তিক হোল্ডিং কোম্পানি সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
আজিজ খান জানান, সামিট পাওয়ার নীতিগত বিষয়গুলো স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগ বিলম্বিত করা এবং উচ্চ ঝুঁকির জন্য আর্থিক শর্তাবলি পুনর্বিবেচনা করাসহ বিকল্পগুলো পর্যালোচনা করে দেখছে।
ভারতের বিদ্যুৎ রপ্তানি নীতিমালায় পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নীতিতে এ ধরনের দ্রুত পরিবর্তন সব সময়ই উদ্বেগের বিষয়। কারণ, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রয়েছে।’
তিনি জানান, নেপাল ও ভুটানে নির্মিত জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ভারত হয়ে যে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির কথা ছিল সেখানে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেছে বাংলাদেশে নতুন সরকারের কারণে। আন্তঃসীমান্ত বিনিয়োগের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে তার কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে।