কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে লোকজনের মধ্যে বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
জেলার সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার বাসিন্দারা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। পানিতে ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা, শাক-সবজির ক্ষেত। মাঠে পানি বেশি থাকায় অনেক এলাকার কৃষক খেতে আমন ধান লাগাতে পারছে না। জলাবদ্ধতায় ২০ লাখ মানুষ আটকা পড়েছে। সড়ক, বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকছে।
আবহাওয়া সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েক দিনও বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
সদর উপজেলার চরমটুয়া গ্রামের কামাল উদ্দিন বলেন, টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে বাড়ির চারপাশে পানি উঠে গেছে। গ্রামের চলাচলের রাস্তা ডুবে গেছে। ঘরে পানি ঢুকে গেছে। বাড়ির কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা সাইছ বাবর বলেন, হাঁটু পানি দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। প্রভাবশালীরা বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করেছে। খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কোথা কোথা খাল দখল করে বাড়িঘরও নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে পানি নামছে না। সেনাবাহিনী এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিয়ে খাল পরিষ্কার করে দিলে জলাবদ্ধতা থাকবে না।
সেনবাগ উপজেলার খুরশিদ আলম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে বাড়ির উঠানে পানি জমেছে। রান্নাঘরেও পানি। পানির কারণে আজ রান্নাও করতে পারিনি। টিউবওয়েলে পানিতে ময়লা আসে। আমরা অসহায় অবস্থায় আছি।’
সুবর্ণচর উপজেলার কৃষক সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘সুর্বণচরের বেশিরভাগ এলাকার কৃষি জমি তলিয়ে গেছে। বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক হাত গুটিয়ে বসে আছে। প্রশাসন যদি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে কৃষক বাঁচতে পারত।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মাছের ঘেরসহ সব ভেসে গেছে। এত পানি আগে দেখিনি। বৃষ্টি হলে পানি নেমে যায় কিন্তু এবার পানি নামছে না।’
নোয়াখালী জেলা শহরের সব রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, স্কুল-কলেজে মাঠ, বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় পানিতে সয়লাব। নোয়াখালী পৌর শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পৌর বাসিন্দাদের বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে।
নোয়াখালীর আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু সমুদ্রে সতর্ক সংকেত চলছে, জেলেদের তীরবর্তী স্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, ‘নোয়াখালীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। যা বিগত ২০ বছরেও হয়নি। এছাড়া জোয়ার থাকায় পানি নামতে পারছে না। আমরা জলাবদ্ধতা রোধ প্রকল্পে শহর ও আশপাশের ১৬১ কিলোমিটার খাল খনন করেছি। এতে করে সব উপজেলায় পানি নিষ্কাশন হওয়ার কথা। তাছাড়া পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেন ও নালা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।’
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অবৈধ বাঁধ কেটে পানি স্বাভাবিক করার কাজ শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমে গেলে পানি কমে যাবে।’
তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য উপজেলা পর্যায়ের সকল মাধ্যমিক, প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বলা হয়েছে। যেখানে যে সহযোগিতা প্রয়োজন তা করা হচ্ছে।