সারা বাংলা

পাহাড়ি ঢলে ডুবছে কুমিল্লা, ঘরবাড়ি ছাড়ছেন মানুষ   

টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে এই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে। পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতেও শুরু করেছে। ফলে অনেকের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী মানুষরা বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে শুরু করেছেন। যাদের কোথাও যাওয়ার নেই তারা বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন।

সেনাবাহিনীর একাধিক টিম নদী রক্ষা বাঁধ পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান। 

জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোথাও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা সে দিকটি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বাঁধের কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান সাময়িক মেরামত করা হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে।  

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারী বর্ষণ ও ভারতীয় ঢলে সীমান্তবর্তী চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং, দেবিদ্বার উপজেলা ও কাঁকড়ি এবং গোমতি নদীর বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছেন এসব এলাকার প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। নাঙ্গলকোট উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ দুই দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর ৩টার দিকে গোমতি নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘গোমতী নদী রক্ষা বাঁধের যেখানে সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেখানে বালুর বস্তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এভাবে পানি ক্রমাগত বাড়তে থাকলে বাঁধের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।’  তিনি নদীপাড়ের মানুষজনকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছি। বাঁধে ফাটল বা ঝুঁকি আছে এমন পরিস্থিতি দেখলে তা পাউবো কিংবা স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন পাউবো’র এই কর্মকর্তা 

পাউবো সংশ্লিষ্টরা বলেন, জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি এলাকার গোমতী চর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকেই বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। 

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা জানান, বাঁধের কিছু অংশ ঝুঁকিপূর্ণ। সকাল থেকে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। 

এদিকে, জেলার আদর্শ সদর উপজেলায় গোমতী চরে পানিবন্দি লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের সহায়তায় তিনটি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে জেলা প্রশাসন। 

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, গোমতী নদীর বাঁধ রক্ষায় জেলা প্রশাসন, পাউবো, সেনাবাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ কাজ করছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সদর উপজেলার শালধর প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমড়াতলী প্রতিবন্ধী উচ্চ বিদ্যালয় ও ধনেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।’