ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় ওই সব এলাকায় তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলাগুলোর লাখ লাখ মানুষ। বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর আড়াইটা থেকে বানভাসি মানুষদের উদ্ধারে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়। তারই প্রেক্ষিতে স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন সেনা সদস্যরা। একইসঙ্গে বিজিবি সদস্য ও শত শত স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধার ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করছেন বন্যা কবলিতদের।
পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, ‘জীবনে এমন ভয়াবহ বন্যা কখনো দেখিনি। সময় বাড়ার সঙ্গে পানি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। টানা বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।’
ফুলগাজী উপজেলার বন্দুয়া গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত ৪০ বছরেও এমন বন্যা দেখিনি। আমার ঘরের ভেতর আড়াই ফুট পর্যন্ত পানি উঠেছে। স্ত্রী সন্তানদের শহরে আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়েছি। বাড়িতে অনেক জিনিসপত্র রয়েছে তাই ঝুঁকি নিয়ে আমি রয়ে গেছি।’
রাসেল নামে এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়তা নিয়ে আসছে। পানির তীব্র স্রোতের কারণে পরশুরামে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমাদের সদস্যরা বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করার চেষ্টা করছে। টানা বৃষ্টিতে চারদিকে পানি থইথই করছে।’
ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তিনদিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। জেলায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’
ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী স্পিডবোট নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে কোস্টগার্ডের একটি টিম শিগগিরই যোগ দেবে। বিজিবি ও স্বেচ্ছাসেবকরা সকাল থেকে আটকে পড়া মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে কাজ করছে।’