টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় চার হাজার হেক্টর এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করলেও দ্রুত দুকূল ছাপিয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গোমতীপাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে নদীটিতে এত পানি দেখেননি তারা। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে গোমতীপাড়ের সব বয়সী মানুষের সঙ্গে নির্ঘুম রাত কাটান স্বেচ্ছাসেবীরা। বুধবরা রাতে তারা দল বেঁধে বেড়িবাঁধ পাহারা দেন।
রাত জেগে বেড়িবাঁধে সতর্ক দৃষ্টি
জানা গেছে, কুমিল্লা সদর উপজেলা, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার এলাকা এরই মধ্যে প্লাবিত হচ্ছে। যে কারণে গোমতী নদীর পানি কিছু কিছু এলাকায় বাঁধের প্রায় নিকটে চলে এসেছে। দুর্বল হয়ে পড়ছে গোমতীর বেড়িবাঁধ। তাই বিভিন্ন অংশ দিয়ে পানি চুইয়ে প্রবেশ করছিল। টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নামা ঢলের পানি ক্রমাগতই বাড়ছে। তীব্র স্রোতের কারণে বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। গোমতীর পুরো বেড়িবাঁধেই পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় জনতা। অনেকেই বলছেন, ‘এটি কুমিল্লার জন্য ভয়ের রাত। তাই নির্ঘুম রাতে বাঁধের কোথাও ফাটল ধরেছে কি না, সেটাই পাহারা দিচ্ছে জনতা।’
দেবিদ্বারের ফতেহাবাদ ইউনিয়নের গোমতী বেড়িবাঁধের লক্ষ্মীপুরে স্থানীয় জনতাকে নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এলাকার লোকজন নিয়ে গোমতী বেড়িবাঁধের লক্ষ্মীপুরে আছি। কোথাও ভাঙার খবর পাইনি। তবে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের নিচ দিয়ে কিছু পানি যাচ্ছে, যা বন্ধে লোকজন কাজ করছে। এতে আতঙ্কে আছে লোকজন। বৃষ্টি ও পানি বাড়ায় এখন যত শঙ্কা।’
দেবিদ্বারের বালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, বেড়িবাঁধের ফাটল রোধে রাতভর জেগে আছি। যারা নদীর পাড়ের বাসিন্দা তারা বোঝে এই রাত কত ভয়াবহ! যেকোনও সময় বাঁধের ক্ষতি হতে পারে, তাই বস্তা, কোদাল ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে প্রস্তুত আছি। কিছু অংশে সেচের স্লুইসগেট ছিল, সেগুলোও বন্ধ করেছি। পানি না কমা পর্যন্ত আমাদের ঘুম নেই।
কুমিল্লা সদরের পালপাড়া, টিক্কারচর, গোলাবাড়িসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবীরা রাত জেগে পাহারা ও বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলাটিতে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।