সাতসতেরো

আফগানিস্তান কেন মরুভূমিতে খাল কাটছে

আফগানিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম খাল খনন করছে। ২৮৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই খালের নাম কোশ টেপা খাল। এই খাল এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম নদী আমু দরিয়ার পানি পরিবহন করার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। নদীর পানি খালে প্রবাহিত করে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হবে।  সেজন্য কোশ টেপা খালকে বলা হচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম নদী। 

এর ফলে আফগানিস্তানে কৃষি উৎপাদনের সম্ভাবনা বাড়ছে অন্যদিকে আঞ্চলিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এমনকি দেশটি বিদ্যুৎ সুবিধাও হারাতে পারে। এর ফলাফল নির্ভর করবে আমু দরিয়া নদীর পানি প্রবাহের ওপর! খাদ্য সংকটে ভোগা আফগানিস্তান কৃষি উৎপাদান বাড়াতে কোনো প্রকার বিদেশি সহায়তা ছাড়াই এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। ২০২২ সালের শুরুর দিকে এই খাল খনন শুরু হয়। ৯কোটি দশ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করতে হচ্ছে। এই কাজে তারা কোনো বিদেশি সহায়তা পাচ্ছে না। খালটি খননে দেশটির রাজস্বের প্রায় আট শতাংশ খরচ করা হয়েছে। প্রায় ৫ হাজার কর্মী এবং তিন হাজার ভারী যন্ত্র ব্যবহার করে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এই প্রকল্পের কাজ চলছে। খালটির গতিমুখে থাকা বালির পাহাড়গুলো কেটে সমতলে নিয়ে আসা এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। খননের কাজ প্রায় একশো কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। 

বৈশ্বির উষ্ণায়নের কারণে বিশ্বের যেসব দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে আফগানিস্তান সেসব দেশের মধ্যে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, ক্ষরা, আকষ্মিক বন্যা— এমন নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করছে দেশটি। একদিকে কৃষিকাজ ব্যহত হচ্ছে অন্যদিকে মানবিক বিপর্যয়ও দেখা দিচ্ছে। 

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের প্রতি ৩ জনের একজন জানে না কখন সে পরবর্তী বেলার খাবার খেতে পারবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দেশটির সরকার কোশ টেপা খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। মরুভূমিও হয়ে যাচ্ছে এই খালের অংশ। 

আমু দরিয়া নদীটি তাজিকিস্তান এবং আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায় সৃষ্টি হয়ে উজবেকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এবং আড়াল সাগরে পতিত হয়েছে। যার কারণে প্রাকৃতিকভাবে আফগানিস্তান এই নদীটি থেকে খুব একটা লাভবান হয় না। এজন্য খাল খননের মাধ্যমে আমু দরিয়ার প্রায় ২০ শতাংশ পানি দেশটির মরু অঞ্চলে প্রবাহিত করা হবে। খাল খনন শেষ হলে মরুভূমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে। চাষের আওতায় আসবে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ হেক্টর জমি। এর মাধ্যমে আফগানিস্তানের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এক তৃতীয়াংশ বেড়ে যাবে।

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে খাল খননের পরিকল্পনাটি কয়েক দশক ধরেই আলোচনায় ছিল। কিন্তু দেশটি একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে থাকায় এই প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের সক্ষমতা কোনো সরকার পায়নি। তালেবান সরকার এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। তবে খাল খননের পর এর পানি প্রবাহ ঠিক রাখা এবং মরুভূমির ভেতর এই খাল রক্ষাণাবেক্ষণ করা বেশ চ্যালেঞ্জের হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে এই কৃত্রিম খাল আঞ্চলিক বিবাদও বাড়তে পারে। কারণ উজবেকিস্তানের তুলা চাষে আমু দরিয়া নদীর পানি ব্যবহৃত হয়। কোশ টেপা খালের কারণে আমু দরিয়ার পানি প্রবাহ কমে গেলে উজবেকিস্তানের সরকার আফগানিস্তানে বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। এদিক আফগানিস্তান উজবেকিস্তানের বিদ্যুৎয়ের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এমনিতে আফগানিস্তানের কাবুলের বাসিন্দারা দিনে মাত্র দুই ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ পায়।