বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বোর্ড পরিচালক হিসেবে নতুন পরিচয় পেয়েছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তবে সাকিব আল হাসানের কাছে তার কাছে এই পরিচয় ভিন্ন। সাকিবের শৈশব গুরু। এখন মেন্টর। তাই ঢাকা টু রাওয়ালপিন্ডি যতবারই কথা হয়েছে দুজনের স্রেফ আলোচনা ছিল ক্রিকেটকেন্দ্রিক। বোলিং ব্যাটিং কিভাবে উন্নতি করা যায়। কিভাবে পারফরম্যান্স আরো বাড়ানো যায় সেসব নিয়েই দুজনের আলোচনা।
মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে দাঁড়িয়ে নাজমুল আবেদীন সেসবই বলেছেন, ‘আমার তো দুইটা রোল আছে ওর সাথে। আমি বোর্ড থেকে কোনো কথা বলিনি। আমি ওর মেন্টর ও কোচ হিসেবে ওর সঙ্গে কথা বলেছি। ওর পারফরম্যান্স নিয়ে ওর ব্যাটিং নিয়ে কথা বলেছি। সেটার সঙ্গে বোর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। ও কিভাবে কি করলে ভালো করবে সেই রোল আমি প্লে করেছি।’
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ে সাকিবের অবদানও ছিল বেশ। বল হাতে ৪ উইকেট পেয়েছেন। যার ৩টিই মহাগুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় ইনিংসে। এছাড়া বল হাতে করেছেন কেবল ১৫ রান। সবচেয়ে বড় বিষয় এই টেস্টে শতভাগ উজার করে দিয়েছেন বাংলাদেশের সুপারস্টার। বোলিং, ব্যাটিংয়ে অবদান রাখার পাশাপাশি চনমনে এক সাকিবকে দেখা গেছে ড্রেসিংরুমে। যা স্বস্তির পরশ নিয়ে আসে।
অথচ ড্রেসিংরুমের বাইরে সাকিবের আকাশে এখন কালো মেঘের ঘনঘটনা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় খুনের মামলার আসামি হয়েছেন সাবেক এই সাংসদ। আইনের দৃষ্টিতে সাকিব এখন খুনের আসামি। মামলার খড়গ নিয়ে মাঠে নামা, দিব্যি পারফর্ম করার মতো কাজ অনায়েসে করা সাকিবকে বিশ্বমানের অ্যাথলেটদের সঙ্গে তুলনা করলেন নাজমুল, ‘মেন্টালি স্ট্রং বলবো না (সাকিবকে)। টপ অ্যাথলেট যারা, যেকোনো স্পোর্টস বা যেকোনো দেশেরই হোক তারা যখন পারফর্ম করতে মাঠে নামে। তারা নেতিবাচক ভাবনাগুলো মাঠের বাইরে রেখে নামে। তারা কেবল খেলার কথাই ভাবে। ওভাবেই কিন্তু তারা নিজেদেরকে তৈরি করে। যেন অন্য কোনো চিন্তা আদৌ না আসতে পারে। সাকিবের ক্ষেত্রেও তাই।’
‘ওকে যখন বল দেয়া হয় ওর অন্য কোনো চিন্তা থাকে না। ও শুধু ব্যাটসম্যানকে নিয়ে চিন্তা করে। কোথায় বল করবে, কি হতে পারে। বাইরের কোনো চিন্তা আসে না। অন্য সময় আসতে পারে। কিন্তু বল যখন হাতে পায় তখন অন্য কিছু মাথায় কাজ করে না। এটাই ওকে অন্যদের থেকে আলাদা করছে। আমাদের অনেক খেলোয়াড়কে দেখে বিভিন্ন ঘটনা সমালোচনা ওদেরকে ওদের ন্যাচারাল খেলা খেলতে দেয় না। কিন্তু সাকিবের ক্ষেত্রে সেটা ঠিক না।’
সাকিব শুধু নিজের বোলিংই নয়, অন্যদেরও উদ্ধুদ্ধ করেছেন বলে মনে করছেন তার গুরু, ‘সাকিব যখন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বোলিং করে তখন কিন্তু স্বস্তি অনুভব করে না। কালকে সেটা দেখিনি কিন্তু। একজন প্রোপার টেস্ট বোলার যেভাবে বোলিং করে সেভাবে সে বোলিং করেছে কিন্তু। বোলিংয়ে তার নিজের ওপর যে আস্থা আছে সেটা নিয়ে কিন্তু বোলিং করেছে। ডানহাতি বামহাতি সব ধরনের প্রস্তুতিতে। এবং মনে হয়েছে যখনই তাকে বল দেয়া হয়েছে উইকেট নেয়ার জন্য বোলিং করছে সে।’
‘অন্য বোলারদের সঙ্গে আলাপ করছে। মিরাজকে আইডিয়া দিচ্ছে। টোটাল ইনভলমেন্ট ছিল। ও নিজেও এনজয় করেছে বোলিং। বোলিং একটা জায়গা যেখানে কিছুটা অসন্তুষ্টির জায়গা ছিল। আমি নিশ্চিত তার আরও বেশি ছিল। আমার মনে হয় এখানে ও সন্তুষ্টি পেয়েছে। সামনে যদি ও সুযোগ পায় তাহলে সেটা কাজে আসবে।’ – যোগ করেন তিনি।
সাকিবকে জাতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে দেশে ফেরাতে বিসিবিকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সাকিবের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হওয়ার কথা প্রথম টেস্টের পর। ৩০ আগস্ট শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। এর আগে সাকিবকে নিয়ে সিদ্ধান্ত চলেই আসবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বোর্ড তার পাশেই আছে।