ভারী বৃষ্টিতে যশোর শহরের নিচু অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে শহরবাসী দুর্ভোগে পড়েছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) রাত ১০টা থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। থেমে থেমে সোমবার (২৬ আগস্ট) বেলা ১০টা পর্যন্ত চলে। সূর্যের দেখা মিলেছে দুপুর দেড়টার পর।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) চাঁচড়া উপকেন্দ্রে পানি উঠায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভোর ৪টা থেকে দুপুর বেলা ১টা পর্যন্ত শহরের ৫৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন ছিল।
যশোর বিমান বাহিনীর আবহাওয়া অফিস জানায়, রোববার রাত ৯টা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর ১০টার পর থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এতে ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত ৬ জুলাই ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
ভারী বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতায় যশোর শহরে বন্যার রূপ নিয়েছে। শহরের রাস্তা ও গ্রামাঞ্চলের মাঠঘাট পানিতে থৈ থৈ করছে। শহরের অন্তত ৩০টির বেশি প্রধান সড়কে পানি জমে আছে। খড়কি এলাকার শাহ্ আবদুল করিম সড়ক, স্টেডিয়াম পাড়া, শহরের পিটিআই, নাজির শংকরপুর, ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে পাইপ পট্টি, বেজপাড়া চিরুনিকল, আশ্রম রোড, শংকরপুর, রেল রোড, মিশনপাড়া, রেলস্টেশন, চোপদারপাড়া, বেজপাড়া তালতলা, টিবি ক্লিনিক মোড়, পুরাতন কসবা, পুলিশ লাইন টালিখোলা, বিমানবন্দর রোড ও ষষ্ঠীতলাপাড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা আলতা বানু বলেন, কয়েক শত বাড়িতে পানি উঠেছে। তার বাড়ির নিচ তলায় হাঁটুপানি জমেছে। টিউবওয়েলের কিছু অংশ পানিতে ডুবেছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রান্নাঘরেও পানি প্রবেশ করায় আজ সকালের রান্নাও বন্ধ ছিল।
একই এলাকায় আকবর হোসেন বলেন, বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা যায়। তা দুই-তিন দিন থাকে। রাত থেকে যে ভারী বৃষ্টি হয়েছে, এতে ভোগান্তি দ্বিগুণ হয়েছে।
শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের ভেতর দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নদী বয়ে গেছে। এর মধ্যে ভৈরব নদ দিয়ে শহরের উত্তরাংশ ও মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশন হয়। গত দেড় দশকে শহরের দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে নামতে পারছে না। পয়ঃনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ওই পানি বের করার জন্য খালের মাধ্যমে মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। পৌরসভা গত দেড় দশকেও সেই উদ্যোগ নিতে পারেনি।
যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও নালার পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা ও নালা সংস্কার ও নির্মাণের জন্য এমজিএসপি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রতি বছর পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হয়। এ বছরও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে পানি সরাতে কাজ করা হয়েছে।
শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা তৌফিক বলেন, অন্তত ৯ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিলেন। দুপুরে আসলেও দীর্ঘক্ষণ থাকছে না। খুব দুর্ভোগে পড়েছেন।
ওজোপাডিকো যশোরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, পানি উঠায় চাঁচড়া উপকেন্দ্রে গ্রিড ফেলের সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সংযোগ চালু করা হলেও পুরোপুরি বিদ্যুৎ সেবা স্বাভাবিক হয়নি। দ্রুতই সমস্যা সমাধান হবে বলে জানান তিনি।