নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে পানির প্রবাহ বেশি থাকায় জেলায় সার্বিকভাবে বন্যার অবনতি হয়েছে। জেলার আটটি উপজেলায় পানি বেড়েছে। তার মধ্যে সদর, চাটখিল, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ ও সোনাইমুড়ী উপজেলায় বেশি বেড়েছে।
এ সব উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ পৌঁছায়নি। ফলে বানভাসি মানুষ কষ্টে দিন যাপন করছে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থরা সমস্যার মধ্যে আছে।
টানা তিন দিন বৃষ্টির পর মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরের পর জেলায় সূর্যের দেখা মিলেছে। এতে মানুষজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।
জেলা প্রশাসন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার আটটি উপজেলা ও সাতটি পৌরসভা বন্যায় আক্রান্ত। এ সব এলাকার ১ হাজার ১৬৯টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে আছে জেলার প্রায় ২১ লাখ মানুষ। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৮টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
নোয়াখালী জেলা শহরের প্রায় প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি অফিস এখনও পানিতে নিমজ্জিত। এর মধ্যে জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গন প্রায় হাঁটু পানিতে সয়লাব। ফলে বিচার কার্যক্রম এক প্রকার স্থবির হয়ে আছে। অতিরিক্ত পানির কারণে পুরো শহরের বাসিন্দারা পানিবন্দি অবস্থায় আছে। শহরের আশ্রয়কেন্দ্রে বানভাসিদের ভিড় লক্ষ্য করার গেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকা থেকে বন্যার্ত মানুষ আসছে।
শহরের আশপাশে ও উপজেলা সদরের নিকটবর্তী এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র ও বাসবাড়িতে আটকেপড়া মানুষ কম-বেশি সরকারি-বেসরকারি সহায়তা বেশি পেলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ তা পাচ্ছে না। কারণ হিসেবে জানা গেছে, পানি বেশি থাকায় ও যোগাযোগের অভাবে এসব এলাকায় সহজে কেউ যেতে পারছে না। জেলায় এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সমুদ্রে গত তিন দিন ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় বৃষ্টি হয়েছে। তবে এখন আর সতর্ক সংকেত নেই। ফলে কোনো রকম ঝড়ো হাওয়া বা বৃষ্টির আশঙ্কা নেই। ধীরে ধীরে আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং পানি ধীরে ধীরে কমে যাবে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, আকাশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আশা করা যায়, বন্যার পানি কমে যাবে। সবার মাঝে সরকারি সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ৮৮২ টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, পাঁচ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও পাঁচ লাখ টাকার পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যা-পরবর্তী সুপেয় পানি পাওয়া ও পানিবাহিত রোগ থেকে মুক্তি এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সেটি মোকাবিলায় প্রশাসন সজাগ রয়েছে।