কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর চূড়ান্ত বিপৎসীমায় পৌঁছানোর ফলে রোববার (২৫ আগস্ট) রাত থেকে খোলা রয়েছে বাঁধের ১৬টি জলকপাট। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানাগেছে, কাপ্তাই হ্রদের পানির ধারণক্ষমতা হচ্ছে ১০৯ এমএসএল (মেন সি লেভেল- গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ)।
সোমবার (২৬ আগস্ট) সকালে পানির স্তর ছিল ১০৮ দশমিক ৮৪ এমএসএল। সন্ধ্যায় পানির স্তর ১০৮ দশমিক ৮৮ এমএসএল। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকাল ৪টায় পানির স্তর ছিল ১০৮.০৮ এমএসএল। বর্তমানে ১৬টি গেইট দিয়ে ১৮ ইঞ্চি করে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে কর্ণফুলীতে। ২৮ হাজার কিউসেক পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, হ্রদে পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে বাঁধের ১৬টি গেট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়। ৬ ঘণ্টা পানি ছাড়ার পর দুপুর ২টায় আবার বন্ধ রাখা হয়। এরপর ৫ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা ৭টা থেকে পুনরায় ৪ ইঞ্চি করে ১৬টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়।
গত ২৪ আগস্ট বিকেল ৩টায় কর্ণফুলী বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি জরুরি নোটিসের মাধ্যমে পানি ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। ওইদিন রাত ১০টায় পানি ছাড়ার কথা থাকলেও পরে পরিবর্তন করে ২৫ আগস্ট সকাল ৮টা ১০মিনিট থেকে পানি ছাড়া হয়। এজন্য ভাটি অঞ্চলকে আগে জরুরি সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় হ্রদের পানি ছাড়ার পরও পানি বাড়ছে। এতে রাঙামাটি জেলার কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। উপজেলাগুলো হলো- রাঙামাটি সদর, বাঘাইছড়ি ও লংগদু।
লংগদু এলাকার স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভারি বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলের কারণে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে আটারকছড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লেমু ছড়ি, উত্তর ইয়ারংছড়ি, ডাঙ্গাবাজার সংলগ্ন কিছু এলাকা ছাড়াও মাইনীমূখের এফআইডিসি, পূর্ব জারুল বাগান, বগাচতরের জালিয়াপাড়া, সাদেক শিবির, ও কালাপাকুজ্জ্যা ইউনিয়নের হোসেনপুর, গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনারগাঁসহ বিচ্ছিন্ন কয়েকটি গ্রামে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে স্বল্প মেয়াদী বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
লংগদুর মাইনীমুখ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড সোনাই এলাকার বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, ‘আমাদের এলাকার বেশকিছু ঘর পানিতে ডুবে গেছে। কাপ্তাই লেকের পানি না কমায় আমরা খুব বিপদে আছি।’
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদ এলাকায় পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার পরিবার। এদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রয়েছে। রাঙামাটির জেলার লংগদু, বাঘাইছড়ি ও রাঙামাটি পৌর এলাকা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষদের জন্য মোট ৫৫ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটি পৌর এলাকায় ১৩ মেট্রিক টন, সদর ইউনিয়নে ১৮ মেট্রিক টন , বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১৪ মেট্রিক টন, লংগদু উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১১ লক্ষ টাকা নগদ অর্থ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তর্পন দেওয়ান বলেন, ‘রাঙামাটি সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ১৮ মেট্রিক টন ও পৌর এলাকায় ১৩ মেট্রিক টন খাদ্য দেওয়া হয়েছে। বরাদ্ধকৃত খাদ্যগুলো ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ও পৌর কাউন্সিলররা বিতরণ শুরু করেছেন।’
রাঙামাটির বাঘাইছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, ‘বাঘাইছড়ি উপজেলায় আগের চেয়ে পানি অনেক কমেছে। বাঘাইছড়ি পৌর এলাকাসহ নিউজিল্যান্ড এলাকায় পানি আছে এখনো। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে পানি কমতে পারে।’
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খাঁন বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের ১৬টি গেইট দিয়ে পানি ছাড়া হচ্ছে। আশা করছি ২-৩ দিনের হ্রদের পানি কমে আসবে। হ্রদ এলাকায় পানিবন্দি মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’