বন্যায় বিপর্যস্ত লক্ষ্মীপুরের জনজীবন। এতে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গৃহস্থ-খামারিরা। বন্যার পানিতে চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া পশু রাখার জায়গা না থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সদর উপজেলার পূর্ব দিঘলী গ্রামের গৃহস্থ হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমার ৬টি গরু। পানিতে সব ডুবে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গরুগুলোকে নিয়ে বাড়ি থেকে দূরে দিঘলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি।
সরেজমিনে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, রুমের ভেতরে মানুষজন আশ্রয় নিলেও বারান্দায় গবাদিপশু রাখা হয়েছে।
খামারি নাসিম বলেন, বাড়ির উঠোনে বুক পরিমাণ পানি। বসতঘর এখনো অর্ধেক পানির নিচে। বন্যায় গোয়ালঘর ভেঙে পড়েছে। নিজেরা না হয় কোনমতে খেয়ে না খেয়ে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিতাম। কিন্তু গরুগুলো নিয়ে বিপদে পড়েছি। তাই পরিবারসহ গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি।
আরেক খামারি সিরাজ মিয়া বলেন, আমার ১৩টি গরু। ৭টি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। বাকি ৬টি একজনের বাড়িতে রেখে এসেছি। চারদিকে পানি থই থই করছে। এতে গো-খাদ্যের চরম সংকট তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাজার থেকে আধা কেজি খৈল কিনে সামান্য কিছু ভিজা খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে গরুকে খেতে দিই। এভাবেও বেশিদিন চলা যাবে না। এদিকে, অর্ধাহারে গুরুগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন্যায় লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলায় ১৩ হাজার ৭০০ একর চারণভূমি প্লাবিত হয়েছে। মারা গেছে ১৮টি গরু, ৫২টি ছাগল ও ১৫টি ভেড়া, ১ লাখ ৫১ হাজার মুরগী ও ৯৭৩টি হাঁস। সব মিলিয়ে এই খাতে ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি ৪১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমুধ রঞ্জন মিত্র বলেন, বন্যার সার্বক্ষণিক মনিটর করেছি। আপাতত গবাদিপশু নিয়ে ঝুঁকি নেই। উপজেলা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি।
তিনি আরও বলেন, গো-খাদ্যের কিছুটা সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় প্রত্যেক উপজেলায় এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পাঠানো হয়েছে। আরও বরাদ্দ এলে চাষি ও খামারিদের মাঝে বিতরণ করা হবে।