সারা বাংলা

মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশাহারা আসমা-মোবারক দম্পতি

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা মোবারক হোসেন ও তার স্ত্রী আসমা আক্তার। গ্রামে কৃষি ও দিনমজুরের কাজ করে দুই সন্তান ও শ্বশুরকে নিয়ে মাটির বাড়িতে থাকতেন তারা। সম্প্রতি বন্যায় আশ্রয়স্থল হারিয়ে এখন দিশেহারা এই দম্পতি। টাকা না থাকায় করতে পারছেন না বাড়ির কাজও। তাই সরকারি অথবা বেসরকারি উদ্যোগে একটি বাড়ি করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। 

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনো এক প্রতিবেশীর বাড়িতে অবস্থান করছেন আসমা-মোবারক দম্পতি। পানির চাপে বিধ্বস্ত হয়েছে তাদের মাটির বাড়ি। বন্যার পানি প্রবেশের সময় সন্তান ও শ্বশুরকে নিয়ে দ্রুত সরে যেতে পারলেও সঙ্গে তারা কিছুই নিতে পারেননি। পানিতে ভেসে গেছে সব জিনিসপত্র। টাকা না থাকায় ঘর মেরামত করা দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। 

আসমা আক্তার বলেন, ‌‘পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে বাচ্চাদের নিয়ে ঘর থেকে বের হই। সবকিছু রেখে এক কাপড়ে গিয়ে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। বাড়িতে থাকা সব মোরগ মারা গেছে। মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ায় সব শেষ হয়ে গেছে আমাদের। গত কয়েকদিন ধরে স্বামী, দুই ছেলে-মেয়ে ও শ্বশুরকে নিয়ে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রয়েছি। সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে কেউ নতুন ঘর করে দিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ান তাহলে অনেক উপকার হবে।’ 

আসমার স্বামী মোবারক হোসন বলেন, ‘কাজ করে পেটের খাবার যোগানো যেখানে দায়, সেখানে সহায়তা ছাড়া নতুন করে ঘর বানানো আমার পক্ষে সম্ভব না। গত কয়েকদিন ধরে মানুষের দেওয়া খাবার খেয়ে কোনভাবে বেঁচে আছি। বন্যার পানি যখন আসছিলো, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় যে কাপড় নিয়ে বের হয়েছি, সেগুলোই এখন আমাদের একমাত্র সম্বল।’ 

মোবারক হোসেনের বাবা কবির আহম্মদ বলেন, ‘নদীর পাড়ে বসবাস করি। এই বয়সে আমি কখনো এতো পানি দেখিনি। একটি জিনিসও ঘর থেকে বের করার সুযোগ পাইনি। পানির স্রোতে ঘর ভেঙে পড়ে মাটিসহ চলে গেছে। নাতি-নাতনিদের নিয়ে কোনোমতে জান নিয়ে বের হয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন যদি কেউ সাহায্য নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে নাতি-নাতনিদের নিয়ে অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মীর হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে তাদের (আসমা-মোবারক) দম্পতির বাড়ি একদম শেষ হয়ে গেছে। কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে এমন অবস্থাও নেই। কৃষি ও দিনমজুরের কাজ করেই তাদের পরিবার চলতো। ভিটেমাটি ছাড়া তেমন কোনো সম্পদ ওদের নেই। এ পরিস্থিতিতে যদি সমাজের বিত্তবানরা পাশে দাঁড়ায় তাহলে তাদের অনেক উপকার হবে। 

ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের পাশাপাশি বসত ভিটার ক্ষতি নিরূপণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ ক্ষতিগ্রস্তদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে।’