নোয়াখালীতে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের সময় গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) পানিতে ডুবে তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে এই শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি জানতে পেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোয়াখালীর শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অসুস্থ শিক্ষার্থীরা হলেন- আরাবী, সালমান ও কথা।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত ২৭ আগস্ট ঢাকা থেকে নোয়াখালীর বন্যার্তদের ত্রাণ দিতে আসেন উত্তরা ইউনিভাসির্টির একদল শিক্ষার্থী। তারা জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায়দের উদ্ধারসহ শুকনো খাবার ও চাল-ডাল বিতরণ করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের খলিফারহাটে ত্রাণ দেওয়ার সময় তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহপাঠীরা তাদের সন্ধ্যার দিকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে জরুরি বিভাগ থেকে তাদের মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডে নেওয়ার পর হাসপাতালে ওষুধ ও স্যালাইন নেই বলে বাইরে থেকে আনতে বলেন। পরে ঢাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে হাসপাতাল থেকেই স্যালাইন দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অসুস্থ আরাবীর ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলে হাতের ক্যানোলা খুলতে একাধিকবার কর্তব্যরত সেবিকাকে ডাকলেও আসেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। নার্স না আসায় পাশের এক রোগীর স্বজন তার হাতের ক্যানোলা খুলে দেন। তিনি ক্যানোলার মুখ বন্ধ না করায় তার হাত থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। এতে শিক্ষার্থী আরাবী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখনো কোনো চিকিৎসক না আসায় অসুস্থ তিন জনকে দ্রুত পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।
এ খবর পেয়ে হাসপাতাল ঘেরাও করেন নোয়াখালীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা বলেন, এখানে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়বো কখনো ভাবিনি। আমাদের বন্ধুরা পানিতে ডুবে অসুস্থ হলে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে সঠিকভাবে চিকিৎসা তো দেয়নি বরং খারাপ আচরণ করেছে। বিষয়টি আমাদের কষ্ট দিয়েছে।
এদিকে, এমন পরিস্থিতিতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাসিনা জাহান, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিমসহ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের বৈঠক হয়। সেখানে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাছুম ইফতেখারসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় উপ-তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাসিনা জাহান দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।
সিভিল সার্জন ডা. মাছুম ইফতেখার বলেন, ঘটনা শুনে আমি দ্রুত হাসপাতালে যাই। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল আমার এখতিয়ারের বাইরে। তবুও আমি নোয়াখালীতে ত্রাণ দিতে আসা অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় গাফিলতির খবর শুনে হাসপাতালে যাই। আশা করছি, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের তত্ত্বাবাবধায়ক ডা. মো. হেলাল উদ্দিনের নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, ঘটনা শোনা মাত্রই সেখানে সিভিল সার্জনকে পাঠানো হয়। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।