পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর প্রকল্পের শ্রমিক সিরাজ ফকিরের (৬৫) হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে পৌর শহরের রহিমপুর এলাকার তিনতলা একটি বাড়ির বাথরুম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার হয়। গত ২৪ আগস্ট সিরাজ ফকির অপহরণ হন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
নিহত সিরাজ ফকির উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের কৈকুন্ডা গ্রামের মৃত জলিল ফকিরের ছেলে। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সিরাজ ফকির তার গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়মিত রূপপুর প্রকল্পে চাকরি করতে যেতেন। সাত-আট বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। কয়েকদিন আগে তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিউটিতে গিয়ে বাড়িতে ফিরে আসেননি। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে গত ২৬ আগস্ট ঈশ্বরদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
নিহতের শ্যালক রাসেল রানা জানান, সিরাজ ফকিরের দুই ছেলে। নিখোঁজের পর অজ্ঞাত ব্যক্তিরা সিরাজ ফকিরের ছোট ছেলের কাছে মুঠোফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাননি পরিবারের সদস্যরা।
নিহতের ছেলে আল-আমিন হোসেন বলেন, ‘গত ২৪ আগস্ট রূপপুর প্রকল্প থেকে কাজ শেষে ঈশ্বরদী শহরের যাওয়ার পথে আমার বাবা নিখোঁজ হন। ওই দিন দুপুর ২টার দিকে বাবার ফোন থেকে আমাকে একজন বলেন, তোমার বাবা আমাদের কাছে আটক আছে। র্যাব-পুলিশের সঙ্গে কথা বলে লাভ হবে না। ১০ লাখ টাকা ২৬ আগস্ট সন্ধ্যার মধ্যে দিতে হবে। না হলে তোমার বাবাকে মেরে ফেলা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৬ আগস্ট রাতে আমি ঈশ্বরদী থানায় জিডি করি। এরপর বাবার নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তবে তাকে পাইনি। শনিবার দুপুরে জানতে পারি, আমার বাবার মরদেহ রহিমপুরের শরিফুল ইসলাম বুলবুলের বাড়িতে পাওয়া গেছে।’
বাড়ির মালিক শরিফুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘গত ২২ আগস্ট উপজেলার বড়ইচরা গ্রামের আজিবর রহমানের ছেলে শাহজাহান আলী (২৮) সস্ত্রীক আমার বাড়ির চারতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। ২৭ আগস্ট এক মাসের ভাড়ার টাকা দিয়ে তারা বাড়ি থেকে বাইরে চলে যান। এরপর থেকে ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ ছিল। গত দু’দিন ধরে চার তলার ফ্ল্যাটটি থেকে পঁচা গন্ধ বের হচ্ছিল। আজ শনিবার সকালে আমি পুলিশে খবর দেই। পুলিশ এসে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।’
রহিমপুর এলাকার বাসিন্দারা জানান, সিরাজ ফকির গত ২৩ আগস্ট ওই এলাকার শরিফুল ইসলাম বুলবুলের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে ওঠেন। এসময় তার সঙ্গে ‘নাতি ও নাতির বউ’ পরিচয়ে দুজন নারী-পুরুষ বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। সঙ্গে সিরাজ ফকিরও থাকতেন। মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে সিরাজ ফকিরের কথিত নাতিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘ঘটনাটি জানতে পেরে আমিসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। প্রাথমিক তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তদন্ত শেষে আরো বিস্তারিত জানতে পারবো।’