নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সমতলের পানি নেমে যাচ্ছে। তবে নিচু এলাকায় এখনো মোটামুটি পানি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার বাড়ি-ঘরে এখানো পানি রয়েছে বলছেন স্থানীয়রা। তবে সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির মোটামুটি উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি না থাকায় এবং গত কয়েকদিন প্রখর তাপ নিয়ে সূর্য ওঠায় উঁচু এলাকার পানি অনেকটাই কমে গেছে। গ্রামীণ এলাকায়ও পানি কমেছে বলে জানা গেছে। তবে যেভাবে কমার কথা সেভাবে কমেনি। ফলে এখনো অনেকটা কষ্টে আছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
জেলার আটটি উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বেশী। এসব উপজেলায় বন্যার্তরা এখনো রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। পানি কিছুটা কমলেও তা ঘরে বসবাস করার মতো নয় বলে জানা গেছে। এদিকে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে নানা সংকট ও দুর্ভোগ। বেড়ে যাচ্ছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। একইসঙ্গে দেখা দিয়েছে সাপের উপদ্রব। এছাড়া কৃষি, মৎস ও প্রাণীসম্পদ খাতে বিপুল পরিমাণ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
চাটখিল উপজেলার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এমন বন্যা নোয়াখালীতে আর দেখিনি। আমাদের উপজেলায় প্রতিটি ইউনিয়ন আক্রান্ত হয়েছে। এখনো বন্যার শিকার মানুষেরা কষ্টে আছে। তারা না পারছে ঘরে ফিরতে, না পারছে আর আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে। সবখানেই দেখা দিয়েছে খাদ্যসহ নানাবিধ সংকট।’
সেনবাগ উপজেলার তানিম বলেন, ‘এখনো পানিতে কষ্ট করছে অনেক মানুষ। তারা খাদ্য সংকটে রয়েছে। একইসঙ্গে বেড়ে গেছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ। রয়েছে সাপের উপদ্রব। বাড়িতে ফিরতে পারছে না বানভাসীরা। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে তারা ঘরে আসতে পারছে না নানা কারণে। বাড়ি-ঘর এখনো বসবাস উপযোগী না হওয়ায় এবং রান্নার পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় তারা বাড়ি ফিরতে পারছে না।’
বেগমগঞ্জ উপজেলার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নিচু এলাকায় এখনো অনেক পানি। নামতে পারছে না। খাল-নালা-জলাশয়-ড্রেন ভরাট থাকায় পানি নামছে না। ফলে এখনো দুশ্চিন্তায় রয়েছে। বিশেষ করে নিন্ম আয়ের মানুষরা বেশি সমস্যায় আছে। তারা যে পরিমাণ খাদ্য পাচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। শিশু খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অসুস্থতরা কষ্টে আছে।’
সদর উপজেলার কামরুল ইসলাম বলেন, ‘খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। পরিবার আছে আশ্রয়কেন্দ্রে। আমি আছি বাড়ি পাহারায়। সন্তানরা প্রায় না খেয়ে থাকার মতো। শুকনো খাবার খেয়ে কত দিন পারা যায়। ঘরে ফেরার পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। রান্না করার চুলা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে রান্না করা খাবার সংকট।’
ফাতেমা একজন বলেন, ‘একটু পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বাড়ি এসেছি। ঘর থেকে পানি নামলেও উঠানসহ পুরো বাড়ির চারপাশে এখনো পানি। রাতে ভয় করে ঘরে থাকতে। সাপের ভয় আছে। সঙ্গে রয়েছে খাদ্যের চিন্তা।’
সুবর্ণচরের মুজহিদুল ইসলাম বলেন, সুবর্ণচর হচ্ছে শস্য ভান্ডার। এখানের কৃষি খাতের পণ্য পুরো দেশে যায়। কিন্তু বন্যায় এ উপজেলার পুরো কৃষি খাত নষ্ট হয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ।
জেলা মৎস্য অফিস বলছে, বন্যায় নোয়াখাীতে প্রায় ৮৫ হাজার মাছের খামার, ঘের তলিয়ে গেছে। এত প্রায় ৬১৬ কোটি টাকা লোকসান হবে। অনেক শিক্ষিত যুবক-তরুণ পথে বসবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, জেলাতে এ পর্যন্ত ৫১ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে সঠিক তথ্য জানা যাবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস বলছে, জেলায় প্রাণী খাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি দেখা যাচ্ছে। এটা আরো বাড়তে পারে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা: সৈয়দ আবদুল অজিম বলেন, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে প্রায় ৬০০ জনেরও অধিক ডায়রিয়া রোগী ও সাপের কামড়ের প্রায় ২০০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন আসছে পানিবাহিত রোগী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নোয়াখালীতে শনিবার প্রায় ৩ সেন্টিমিটার পানি কমেছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, বন্যার্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য জেলাতে ৮৮ টিম কাজ করছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক দলও রয়েছে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলাতে ১৪০০ আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো প্রায় আড়াই লাখ মানুষ রয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ২০ লক্ষাধিক। এসব বানভাসীর মাঝে সরকারিভাবে ১৮০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৪৫ লাখ টাকা, শুকনো খাবার ও গো-খাদ্য দেওয়া হয়েছে।