চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি স্বাভাবিক হচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যটির ওপর ভারত সরকারের অপ্রত্যাশিত শুল্কারোপ করায় আমদানি কমেছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। তারা জানান, শুল্ক কমালে বাড়বে পেঁয়াজ আমদানি। ফলে খুচরা বাজারে কমবে এই খাদ্যপণ্যটির দাম।
বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্টলিংক লিমিটেডের পরীসংখ্যান অনুযায়ী- গত চার দিনে ১৩৬টি ট্রাকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ৩ হাজার ৬৩১ দশমিক ২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ভারত থেকে ৪১টি ট্রাকে ১ হাজার ১৪৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন, বুধবার ৩০টি ট্রাকে ৮৫৭ দশমিক ২ মেট্রিক টন, গত বৃহস্পতিবার ৩৬টি ট্রাকে পেঁয়াজ এসেছে ১ হাজার ৩৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে শনিবার এই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ এসেছে ২৯টি ট্রাকে ৫৯৪ মেট্রিক টন।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রায় সাড়ে ৫ মাস আমদানি বন্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় চলতি বছরের ৪ মে। ৪০ শতাংশ শুল্ক থাকায় আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে মে মাসের ৯ তারিখ থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়।
আমদানিকারকরা পেঁয়াজের ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শুল্কারোপের নীতিমালা সংশোধনের কথা ছিল জুলাই মাসে। ৪০ শতাংশ থেকে ৪-৬ শতাংশ শুল্ক কমানোর কথা ছিল। তবে, এক মাস পার হয়ে গেলেও এই সঙ্কট নিরসন হয়নি। ফলে আমদানিকারকরাও পেঁয়াজ আমদানিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। আগে যে পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করা হতো, এখন তা আর হয় না।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালের শুধু আগস্ট মাসে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৫১ হাজার ৬৯৪ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। অচথ চলতি বছরের আগস্ট মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে মাত্র ১৮ হাজার ৭৩০ দশমিক ২ মেট্রিক টন। প্রায় ৩ শতাংশ পেঁয়াজ কম আমদানি হয়েছে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক আসাদুল হক বলেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৬ টাকা শুল্ক দিতে হতো। এখন দিতে হচ্ছে ১৮-১৯ টাকা। ফলে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। লাভ না হওয়ায় অনেক আমদানিকারক পেঁয়াজ ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।’
গত কয়েক মাস ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ বহাল রেখেছে। এ কারণে অনেক আমদানিকারক পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছেন। যার কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম চড়া। যদি ভারত সরকার আরোপিত শুল্ক কমায়, তবে ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তা- সবাই উপকৃত হবেন।’
আমদানিকারক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত শুল্কে ভারত থেকে পেঁয়াজ নিয়ে এলে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দাম নাগালের বাইরে চলে যাবে। এতে আমরাও বিপাকে পড়েছি।’
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারগুলোয় প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা দরে। গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারভেদে ৫-৮ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
শিবগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘আমদানি কম তাই পেঁয়াজের দাম বেশি। আগে গোডাউনে ২-৩ ট্রাক পেঁয়াজ আনতে পারতাম। এখন এক ট্রাক পেঁয়াজ পেতেই হিমশিম খেতে হয়। বাড়তি টাকা তো দিতেই হয়।’
সোনামসজিদ উদ্ভিদ সংগনিরোধের উপ-পরিচালক সমির ঘোষ বলেন, ‘আগের থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে। শুল্কারোপ বেশি হওয়ায় আমদানিকারকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ কম আনছেন। কী পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি কমেছে তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা।’
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের ডেপুটি কমিশনার অব কাস্টমস মো. নুর উদ্দিন মিলনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য মেলেনি।