অর্থনীতি

ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে আইন পরিপালন নিয়ে বিতর্ক

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইন পরিপালন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। ডিএসইতে নিয়োগ পাওয়া ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্যে ২ জনের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মালদ্বীপ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কে এ এম মাজেদুর রহমান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডক্টর নাহিদ হোসেনের নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে বলে বিতর্ক ওঠেছে। আর ডিএসইর চেয়ারম্যান হিসেবে কে এ এম মাজেদুর রহমানকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

ডিএসই রেগুলেশন, ২০১৩ এর ৫ ধারার ‘এফ’ উপধারায় বলা আছে, স্টক এক্সচেঞ্জের কোন ট্রেকহোল্ডার বা শেয়ারহোল্ডারের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে বা ছিল, এমন কেউ ডিএসইর স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। এছাড়া ‘জি’ উপধারায় বলা হয়েছে, শেয়ারবাজার মধ্যস্থতাকারী কোনো প্রতিষ্ঠানে (মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিসহ) সর্বশেষ ৩ বছরের মধ্যে কর্মী বা পরিচালক হিসেবে জড়িত থাকা কেউ স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। এছাড়া ‘জে’ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মী ডিএসইর স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না।

ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের ৪.২ এর (ই) এর ৬-এ বলা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জের কোনো ট্রেকহোল্ডার বা শেয়ারহোল্ডারের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে বা ছিল, এমন কেউ ডিএসইর স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। ৭-এ বলা হয়েছে, শেয়ারবাজার মধ্যস্থতাকারী কোনো প্রতিষ্ঠানে (মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিসহ) সর্বশেষ ৩ বছরের মধ্যে কর্মী বা পরিচালক হিসেবে জড়িত থাকা কেউ স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন। এছাড়া ১০-এ বলা হয়েছে, কোনো নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মী ডিএসইর স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না।

এমন বিধান থাকার পরও কে এ এম মাজেদুর রহমান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডক্টর নাহিদ হোসেনকে স্বাধীন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি। যেখানে মাজেদুর রহমান সর্বশেষ ৩ বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ও ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার একে খান সিকিউরিটিজ ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে তিনি একে খান সিকিউরিটিজে পরিচালক হিসেবে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিলেন।

বিএসইসি যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে, সেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে কর্মরত রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব ডক্টর নাহিদ হোসেন। যদিও বিএসইসি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান বলা হয়। কিন্তু দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। অর্থ মন্ত্রণালয় বিএসইসির যেকোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যভুক্ত একটি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘বিএসইসির আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি সর্বশেষ ৩ বছর শেয়ারবাজারের মধ্যস্তাকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকেন, তাহলে তিনি ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারেন না। কিন্তু মাজেদুর রহমান একে খান সিকিউরিটিজে পরিচালক হিসেবে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিলেন। এটি সিকিউরিটিজ আইন পরিপন্থী।’

এদিকে, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে কর্মরত রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব ডক্টর নাহিদ হোসেন। তিনি দীর্ঘদিন অর্থ মন্ত্রণালয়ে শেয়ারবাজার তদারকি করে যাচ্ছেন। তাই তাকে ডিএসসির স্বতন্ত্র পরিচালককে অন্তর্ভুক্ত করার কারণে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট সৃষ্টি হতে পারে।’

এ বিষয়ে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র ফারহানা ফারুকী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিশন দেখে শুনে ডিএসইর সব স্বতন্ত্র পরিচালককে নিয়োগ দিয়েছে। এই নিয়োগে কোনো আইনের ব্যত্যয় ও কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট (স্বার্থের ব্যত্যয়) হয়েছে বলে কমিশন মনে করে না।’