বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের চর বহুলা গ্রামের বাবুল হোসেন। গতানুগতিক চাষাবাদের বাইরে তিনি এবার ফলবাগানের মধ্যে বস্তায় আদা চাষ করেছেন, যা ঐ এলাকায় একদমই নতুন। তার আদা দেখাশোনা এবং পরিচর্যা করার জন্য প্রতিনিয়িত গ্রামের ৪-৫ জন পুরুষ এবং ৭-৮ জন নারী শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন।
প্রথমবারেই প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার আদা বিক্রি করতে পারবেন বলে মনে করছেন বাবুল হোসেন।
আদা চাষ মাটিতে আর বস্তায় দু’রকমভাবেই করা যায়। তবে বস্তায় আদা চাষ খুব লাভজনক, যা সহজেই করা যায় বলে জানায় কৃষি কর্মকর্তারা। বাবুল হোসেন কৃষিজমি ব্যবহার না করে তার ৯ বিঘার ফল বাগানের মধ্যে ৬০ হাজার বস্তা বারি আদা-২ জাতের আদার চাষ করেছেন। সরেজমিনে বাবুল হোসেনের আদার জমিতে গিয়ে দেখা যায়- লিচু, মেহগনি, কলাসহ বিভিন্ন বড় গাছের মধ্যে সিমেন্টের বস্তায় সারি সারি সাজানো আদা গাছ। কয়েকজন শ্রমিক সেখানে পরিচর্যা করছেন। বস্তাগুলোকে বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছেন তারা। যা দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যায়। পুরো বাগান দেখাশোনা করেন ঐ এলাকার কৃষক সাদ্দীন শেখ। বাবুল হোসেন ব্যবসায়ী কাজে বেশিরভাগ সময় ঢাকাতে অবস্থান করায় সাদ্দীন শেখই সে দায়িত্ব পালন করছেন। সাদ্দীন শেখ জানান, লিচু বাগানের মধ্যে তো অন্য ফসল করা যায় না। তাই উপজেলা কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বস্তায় আদা চাষের পরামর্শ দেন। কিন্তু বস্তায় কিভাবে আদা চাষ করতে হয় সেটা জানতাম না। পরবর্তীতে বাবুল হোসেনসহ আমরা কয়েকজন উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৩ দিনের একটা প্রশিক্ষক নিলাম। সেখানে কিভাবে বস্তায় আদাচাষ করে, কিভাবে পরিচর্যা করে সেটা সম্পর্কে ভালো ভাবে জানলাম। ট্রেনিং থেকে আমরা বস্তায় আদা চাষের জন্য আমরা আগ্রহী হওয়ার পরে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় একটা প্রর্দশনী হয়। প্রদর্শনীতে ১০০ বস্তা আদা চাষের জন্য সহায়তা করে। কিন্তু বাবুল হোসেন একবারে ৬০ হাজার বস্তা আদা চাষ করার পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করেন।
তিনি জানান, এত বস্তা আদা যদি মাঠের জমিতে করা হয় তাহলে ঐ জমিতে তো অন্য কিছু এক বছর করা যাবে না। তাই আমরা এই বাগানের মধ্যে শুরু করলাম। এখানে এই বস্তায় আদা চাষ যেহেতু নতুন তাই এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ দেখতে আসেন। সেই সাথে এক-দুই বস্তা করে বাড়িতে করার জন্য আগ্রহ দেখায়।
তিনি বলেন, মাটির তুলনায় বস্তায় আদা চাষ করা লাভজনক। কারণ, বস্তায় জমি চাষ করা লাগে না, রোগবালাই কম হয়, আদা সংগ্রহ সুবিধা, আদার ফলন বেশি সেই সাথে যে কোনো সময় বস্তা সরানো যায়। তাছাড়া বস্তায় আদা চাষ করলে মাটির চেয়ে তিনগুণ ফলন পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, বস্তায় আদা চাষ করার কারণে অনেক শ্রমিক এখানে কাজের সুযোগ পেয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। আশা করছি, খরচের ৫ গুণ লাভ পাবো। সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো আদা বিক্রির আশা করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যমতে, কুষ্টিয়া জেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়েছিলো। এবছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেটি বেড়ে ৮ হেক্টর হয়েছে। এছাড়া কৃষকরা বসতবাড়ির আশেপাশে, ফলবাগানে, পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করছেন।
কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, আমরা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের বস্তায় আদা চাষের উপরে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি। সেই সাথে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা প্রদর্শনী স্থাপন করছি যাতে কৃষকরা এ বস্তায় আদা চাষে আরো আগ্রহী হয়।
বস্তায় আদা চাষের উপরে গুরুত্ব দিয়ে যশোর অঞ্চলের ৩১টি উপজেলায় প্রদর্শনী স্থাপন করেছে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প। এর মাধ্যমে কৃষকরা হাতে কলমে বস্তায় আদা চাষ শিখছেন এবং নিজ নিজ বাড়িতে বস্তায় আদা চাষ করছেন বলে জানান প্রকল্প পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ।